মো: নাঈম হোসেন তালুকদার
প্রকাশ: ১৮:৩৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফরিদা বেগম বিয়ে বাড়ির বেঁচে যাওয়া খাবার বিক্রি করছেন। ছবি: মো: নাঈম হোসেন তালুকদার।
অভাবের তাড়নায় যখন জীবন থমকে গিয়েছিল তখন হাল না ছেড়ে সেই অভাবকে তিনি তার সাফল্যের সিঁড়ি বানিয়েছেন। স্বল্প টাকায় বিয়ে অনুষ্ঠানের বেঁচে যাওয়া খাবার বিক্রি করে তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি বরং অনেকের জন্য বড় অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
ফরিদা বেগম বয়স (৪০) থাকেন মিরপুর এক এর শাহ আলী মাজারের পাশের এক গলিতে। ৪০ বছর যাবৎ বিক্রি করে আসছেন বিয়ে বাড়ির বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার যা সুস্বাদু ও রশনা বিলাসী!
ফরিদা বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার পর এক মেয়েকে নিয়ে কি করবেন এমন পরিস্থিতিতে তিনি প্রথমে চা বিক্রির দোকান দেন স্বল্প পুঁজি নিয়ে । কিন্তু দোকানে বাঁকি বেশি হওয়ায় তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপরে পিঠার দোকান দেন, যেটা ভালো চলতো । কিন্তু পিঠা শীতকালীন খাবার হওয়ায় তা একটি সাময়িক ব্যবসা ছিল। অন্য মৌসুমে তেমন বিক্রি হতো না। কি ব্যবসা করা যায় সেটি নিয়ে মাথা যখন নষ্ট হবার উপক্রম, তখন ফরিদা বেগমকে তাঁর মেয়ে বুদ্ধি দেয় --যদি তারা কমিউনিটি সেন্টারের বিয়ে ও অন্যান্য উৎসবের বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তাহলে কেমন হয়! যেই কথা সেই কাজ…প্রথমে অল্প পরিমাণ খাবার নিয়ে মিরপুর শাহ আলী কলেজ গেটের সামনে ভ্যান নিয়ে বসে পড়েন ফরিদা। খাবারের মান ভালো হওয়ায় এলাকায় বেশ সাড়া পড়ে যায়। এই ব্যবসার সাথে আছেন তিনি প্রায় ৪০ বছর!
ফরিদা বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেল এই ব্যবসাতে ভালো লাভ থাকে। তিনি মিরপুরের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি এই ব্যবসা শুরু করেন।
প্রথম প্রথম তিনি কমিউনিটি সেন্টারে বাবুর্চিদের কাছে গিয়ে খাবার কিনে আনতেন কিন্তু এখন তার আর যেতে হয় না । বাবুর্চি ও স্টাফরা তাদের অতিরিক্ত খাবার তাঁর কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে যায়। শুধু যে বাবুর্চি ও স্টাফ এমণ করে তা নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মালিকরাও এখন তাঁর কাছে খাবার বিক্রি করে যান। তিনি বলছিলেন, যদি কোন অনুষ্ঠানে ৫০০ মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়, বাস্তবে আসেন ৩০০ জন অতিথি। অন্তত প্রায় ১০০ জনের খাবার বেঁচে যায়। এত খাবার মালিকপক্ষ কি করবে সেটি বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই মালিকপক্ষ ফরিদার সংগে যোগাযোগ করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি বেঁচে যাওয়া খাবার বিক্রি করে দেন।
ফরিদা আরো বললেন তাঁর কাছে বিয়ে বাড়ির সকল ধরনের খাবার পাওয়া যায়, কেননা দিনে নানা কমিউনিটি সেন্টার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে খাবার আসে।
কি কি পাওয়া যায় তার কাছে, তার উত্তরে তিনি বলেন, গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, মাছ টিক্কা, পোলাও, কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, জর্দা ও আরও মুখরোচক খাবার আসে।
এখানে কিনতে আসা এক ভোক্তা সেলিনা আক্তার এসেছেন এখানে খাবার কিনতে । তিনি থাকেন মিরপুর ৬ নাম্বার সেকশনে। তাঁর সাথে কথা বলে জানা গেল এখানে অল্প মূল্যে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। তিনি প্রায় এক সপ্তাহ পরপরই এখানে এসে খাবার কিনে নিয়ে যান। “দোকানে এক কেজি মাংস ৮০০ টাকা, আর রান্না করতে আরো বিভিন্ন মসলা দিতে হয়। তাতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই খেলার কাছে এক কেজি ৬০০ গ্রাম রান্না করা মাংস পাওয়া যায় মাত্র ৬০০ টাকায়। এই খাবারগুলো সুস্বাদু আর রান্নার ঝামেলা থেকে বাঁচা যায়।”
ফরিদা বলছিলেন শীতকালে বিয়ে বেশি হয় তখন খাবারও বেশি পাওয়া যায় । ”তখন একটু কম দামে খাবার দিতে পারি। এমনকি ভোক্তাদের তখন ৫০০ টাকা বা ৪০০ টাকাতেও এক কেজি মাংশ দেই।”
তাঁকে এই ব্যবসায় সাহায্য করে তাঁর নাতি এবং মেয়ে। তাঁর দৈনিক বিক্রি হয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ফরিদা বেগমের গল্প আমাদের শেখায় যে জীবনের প্রতিকূলতাকে কিভাবে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়!