ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মিরপুরের চা স্টলে মাসিক আয় এক লাখ টাকা

মোঃ নাঈম হোসেন তালুকদার

প্রকাশ: ১৮:২৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:৩১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিরপুরের চা স্টলে মাসিক আয় এক লাখ টাকা

কাজী শাহ বিকাশ-এর চায়ের স্টল। ছবি: মোঃ নাঈম হোসেন তালুকদার

প্রথমে তাঁর বিক্রি হতো দিনে মাত্র দুই ডজন কাপ চা। আর এখন বিক্রি হয় ৪০০ কাপ! এই সফল চা বিক্রেতার নাম নাম কাজী শাহ বিকাশ (২৬)।  থাকেন মিরপুরের রাইনখোলা বাজারের পাশের একটি ফ্লাটে।

তাঁর দোকানে চা ছাড়াও পাওয়া যায় হট পেটিস, কেক, সিঙ্গারা, সামোচা, ভেজিটেবল রোলওে আরো মুখরোচক খাবার।  এই খাবারগুলো তিনি তাঁর নিজের বাসায় তৈরি করে থাকেন। স্টলটি একটি ভাল জায়গায় নিয়েছেন তিনি---ঢাকা কমার্স কলেজের পাশের চার রাস্তার মোড়ে। এখানে বিকেল থেকে নানা বয়সের লোজকন বিশেষত করুন-করুণীরা তাদের বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সাথী নিয়ে আড্ডা দিতে আর চা পান করতে আসেন এই স্টলে।  

কিন্তু, দোকানী হলেও তাঁর ভিন্ন একটি পরিচয়ও আছে। তিনি বাংলা কলেজের ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এই চায়ের দোকান দিয়ে বসেছেন। চা বিক্রি করে মাসে আয় করেন প্রায় এক লাখ টাকা! শাহ বিকাশের একান্ত ইচ্ছে দোকানটি একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করা।

শাহ বিকাশ বিজবাংলাকে এমনটিই বলছিলেন। তিনি বললেন, ছোটকাল থেকেই ব্যবসা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। চাকরির প্রতি তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। তিনি দেখেন, তাঁর বড় ভাই অনেক পড়াশোনা করার পরও ভালো চাকরি পাচ্ছিলেন না। বেকার মানুষের যন্ত্রণা অনুভব করেন বিকাশ। এর ওপর পারিবারিক একটি চাপ তো থাকেই। এসব কথা ভেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রথাগত চাকরির পিছে না ছুটে তিনি ব্যবসা করবেন।

যেই বলা সেই কাজ শুরু করলেন প্রথম বর্ষ থেকেই। আগে প্রাইভেট টিউশন করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। তারপর, জীবনের প্রথম ব্যবসায় নেমে পড়েন ভাঙাডি (রিসাইক্লিং) ব্যবসা শুরু করার মধ্য দিয়ে। এই ব্যবসায় লাভ ভালই হতো। তবে জায়গা লাগতো অনেক বেশি। আর ঢাকা শহরে কোন গুদাম বা বড় ধরনের দোকান ভাড়া নিতে গেলে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মত এডভান্স মানি দিতে হয় । ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায় কোন বিনিয়োগ করলে সাথে সাথে সেটি উঠেও আসে না।

বিকাশ তখন চিন্তা করতে শুরু করেন কি করা যায়! তিনি খেয়াল করলেন মিরপুর ১ থেকে ১০ পর্যন্ত অনেক খাবারের দোকান আছে, এগুলো বিকেল থেকে শুরু হয় । তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, চায়ের দোকান দিবেন। কিন্তু কি এমন খাবারের দোকান দিবেন তা নিয়ে আবারও দ্বিধা শুরু হয়। তিনি চাচ্ছিলেন যে এমন খাবারের দোকান দিবেন, যেগুলোর চাহিদা সব সময় থাকে। শেষমেষ দুঃচিন্তার অবসান ঘটিযে চায়ের দোকান দেবেন বলে মনোস্থির করেন। চা এমন একটা পানীয় যেটা শীত-বর্ষা-গরম, সব সময় চলে। যেই বলা সেই কাজ--- তখনই কমার্স কলেজ রোডের  ’চ’ ব্লকে এই চার রাস্তার মোড়ে দুই লক্ষ টাকা এডভান্স দিয়ে দোকান ভাড়া নেন আর ৩০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে শুরু করেন চায়ের সাথে ’টা’ ব্যবসা! দুবছর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম চায়ের দোকান নিয়ে বসেন। নিয়মিত ক্রেতাদের একজন হলেন, ইসরাফিল । তিনি বিজবাংলাকে বলেন, “আমরা নিয়মিত এই ভাইয়ের দোকানে আড্ডা দেই, আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন ঠিক রাত আটটার দিকে এখানে চলে আসি। এই দোকানের দুধ চা খুবই মজার এবং পান করতে অনেক ভাল লাগে। তবে, দাম একটু বেশি। কিন্তু খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে গরমকালে তার লেমোনেড ও অন্যান্য ফলের রস খুবই মজাদার! তাই আমরা এখানে আড্ডা দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।”

সরোজমিন করে দেখা গেল বিকাশের দোকানে (স্টলের নামটিও বিকাশ) সব বয়সের  ভোক্তা থাকলেও তরুণ তরুণীদের আড্ডা চোখে পড়ার মত।

তিনি বলেন, স্টল তিনি খোলেন বিকাল চারটার সময় এবং বন্ধ করেন রাত বারোটা সাড়ে বারোটার দিকে। তাঁকে সাহায্য করার জন্য একজন তরুণ রেখেছেন যাদের মধ্যে একজনের মানিক বেতন ছয় হাজার টাকা এবং অপর জনের বেতন ৮ হাজার টাকা। তাঁর খাবারগুলো তৈরি হয় তাঁর ঘরেই। এই খাবারগুলো তৈরি করতে তার মা তাঁকে সাহায্য করেন। বিকাশ দিনে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর রাতে চাযের স্টলে। এর মধ্যেই পড়ালেখার কাজ সময় বের করে সারতে হয় তাঁর!

 

 

আরও পড়ুন