ঢাকা, রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

৩ কার্তিক ১৪৩২, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হউন

নিজের প্রতি সদয় হলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের তিনটি উপকার হয়

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২:১০, ৫ অক্টোবর ২০২৫

নিজের প্রতি সদয় হলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের তিনটি উপকার হয়

প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।


"নিজের প্রতি সদয় হোন"— এই সহজ পরামর্শটি কঠিন সময়ে প্রায়শই দেওয়া হয়। তবে যারা অত্যন্ত উদ্যমী (driven) বা নিখুঁতবাদী (perfectionist), তাদের কাছে এই আত্ম-সহানুভূতির ধারণাটি স্বস্তি বা আলস্যের মতো মনে হতে পারে। তাদের মনে হতে পারে, এর মানে হলো নিজেকে দায়মুক্ত করে দেওয়া।

কিন্তু মনোবিজ্ঞানের গবেষণা ভিন্ন কথা বলে। লাগাতার লজ্জা এবং আত্ম-সমালোচনা অনুভব করা মস্তিষ্কের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়াকে শারীরিক বিপদের মতোই সক্রিয় করে তোলে। এটি কর্টিসল এবং প্রদাহ (inflammation) বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যুক্ত।

অন্যদিকে, নিজের প্রতি সদয় হওয়া— মনোবিজ্ঞানে যা "আত্ম-সহানুভূতি" (self-compassion) নামে পরিচিত— তা বার্নআউটের ঝুঁকি ছাড়াই আপনার প্রেরণা, জবাবদিহিতা এবং স্থিতিস্থাপকতা (resilience) বৃদ্ধি করতে পারে, ফিচারটি লিখেছে জাপান টুডে।।

আত্ম-সহানুভূতির তিনটি সুবিধা
আত্ম-সহানুভূতি হলো নিজেকে দয়া, মমতা এবং ঘটমান বিষয়ের প্রতি একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা— নিজের ভুল বা ব্যর্থতার জন্য নিজেকে বিচার না করা। এর মূল উপাদানগুলো হলো: সচেতনতা (যন্ত্রণা অস্বীকার বা অতিরঞ্জিত না করা), আত্ম-দয়া (সমালোচনার পরিবর্তে সমর্থন দেওয়া) এবং মানুষ হিসেবে অভিন্নতা (মনে রাখা যে অপূর্ণতা মানুষের জীবনেরই অংশ)।

নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো:

১. শরীরের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া হ্রাস:
ক্রমাগত মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস (chronic stress) সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগ এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মতো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি করে। আত্ম-সহানুভূতি আমাদের মস্তিষ্কের প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেমকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে শান্ত করতে এবং বিশ্রাম নিতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি হৃদস্পন্দনের পরিবর্তনশীলতাকে উন্নত করে— যা মানসিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্থিতিস্থাপকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

২. প্রতিক্রিয়া গ্রহণ এবং মানিয়ে নিতে সাহায্য:
অনেকেই ভয় পান যে আত্ম-সহানুভূতি তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলবে। কিন্তু যখন আমরা নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, তখন আমরা অন্যদের প্রতিও আরও বেশি সংবেদনশীল হতে পারি। আমরা স্বাস্থ্যসম্মত মানিয়ে চলার কৌশল (coping strategies) অবলম্প্রবন করে ব্যর্থতা থেকে দ্রুত নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারি। আত্ম-সহানুভূতি শেখায় যে ভুল হলে নিজেকে “আমি যথেষ্ট ভালো নই” বলার পরিবর্তে আমরা যেন বলি: “এটি কঠিন ছিল, পরের বারের জন্য কী শিখতে পারি?” নিজের ভুলকে সহানুভূতি দিয়ে দেখলে, আমরা অন্যদের প্রতিও সেই সহানুভূতি প্রসারিত করতে পারি।

৩. সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি:
অনেকের ধারণা, আত্ম-সহানুভূতি মানুষকে অলস বা উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন করে তোলে। কিন্তু গবেষণা বিপরীতটা দেখায়। যারা এটি অনুশীলন করেন, তারা তাদের কাজের দায়িত্ব নিতে, ব্যর্থতার পর আবার চেষ্টা করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে স্থির থাকতে বেশি ইচ্ছুক হন। তারা কাজ ফেলে রাখেন না এবং কম আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেন। এর বিপরীতে, লজ্জা ও নেতিবাচক আত্মসম্মান সাময়িক কর্মক্ষমতা বাড়ালেও তা দীর্ঘকাল ধরে ধরে রাখা কঠিন হয়।

কীভাবে আত্ম-সহানুভূতি অনুশীলন করবেন
নিজের প্রতি কঠোর হওয়া যদি আপনার অভ্যাস হয়, তবে এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে দেখুন:

সহৃদয়তার প্রশ্ন: যখন আপনি কঠোরভাবে নিজের সমালোচনা করছেন, তখন এক মুহূর্তের জন্য থেমে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: "আমার প্রিয় কেউ এই পরিস্থিতিতে থাকলে, আমি তাকে কী বলতাম?" এরপর সেই একই কথা নিজেকে বলুন।

নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার: "আমার এমন অনুভব করা উচিত নয়" বা "আমি আবার ব্যর্থ হলাম" এমন ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বাক্য ব্যবহার না করে, নিজের চিন্তাকে কম ব্যক্তিগত করার চেষ্টা করুন। বলুন: "এটি কঠিন," অথবা "আমিই একমাত্র নই, যার এমন অনুভব হচ্ছে।"

বড় ছবি দেখুন: মনে রাখবেন, সংস্কৃতি, পটভূমি বা ব্যক্তিত্ব নির্বিশেষে সবাই সন্দেহ, অনুশোচনা বা অপূর্ণতার অভিজ্ঞতা লাভ করে। নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনি একা নন।

ভালোবাসা-দয়ার মেডিটেশন (Loving-Kindness Meditation): এই ধরনের মেডিটেশন নিজের ও অন্যের প্রতি শুভ কামনা ও সদয় চিন্তা পাঠানোর মাধ্যমে আত্ম-সহানুভূতি বিকাশে সাহায্য করতে পারে।

আপনি অসুস্থতা, দীর্ঘস্থায়ী চাপ বা দৈনন্দিন জীবনের চাপ— যা-ই মোকাবিলা করুন না কেন, নিজের প্রতি সদয় হওয়া কোনো প্রশ্রয় নয়— এটি এমন একটি দক্ষতা যা আপনার স্বাস্থ্য, মন এবং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করে।
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন