ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ক্রমেই কমে যাচ্ছে প্যাডেল চালিত রিক্সা

’মোটর রিক্সার কারণে দূর্ঘটনা বাড়ছে’

মোঃ নাঈম হোসেন তালুকদার

প্রকাশ: ১৬:৪৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্রমেই কমে যাচ্ছে প্যাডেল চালিত রিক্সা

রিক্সা-চালক কাজল মিয়া। ছবি: মোঃ নাঈম হোসেন তালুকদার।

 

প্যাডেল চালিত রিক্সা হলো তিন চাকার একটি ছোট বাহন যা মানুষ পা দিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে চালিয়ে থাকে। প্যাডেল চালিত রিক্সা অনেক যাত্রীই পছন্দ করেন। এই রিকশা চালাতে কোন ধরনের জ্বালানি লাগেনা, তাই এটি পরিবেশবান্ধব বাহন।

দুই কোটি মানুষের এই শহরে প্যাডেল চালিত রিক্সা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে । এখন মোট রিক্সার ১০ শতাংশ প্যাডেল চালিত কিনা তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। তবে পুরানো ঢাকার অলি-গলিতে প্যাডেল বিক্সা বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

অনেক সময় বিদেশীদের রিক্সায় ঘুরতে দেখা যায়। এটিও এখন কমে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।কিন্তু তাতে কি! আমাদের এই ঢাকা যেন রিক্সারই শহর।

ঢাকা শহরে অনেকেরই জীবিকা নির্বাহ হয় প্যাডেল (ও মোটর চালিত) রিক্সা দিয়ে। এমনই একজন রিক্সা চালক হলেন কাজল মিয়া। বয়স ৩৮ বছর, আর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ। ঢাকায় থাকেন মিরপুরের লালকুঠির এক গ্যারেজে। তিনি বলছিলেন, উদ্যোক্তরা এখন আর বেশি প্যাডেল চালিত রিক্সা তৈরি করে না। ব্যাটারি চালিত রিক্সা দিয়ে এখন তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাওয়া যায়। তাই মানুষ পা-চালিত রিক্সায় উঠতে চায় না। কাজল বিজবাংলাকে বলেন,”আমি বিকেল চারটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত রিক্সা চালাই। রাতের বেলায় ব্যাটারি চালিত রিকশা তেমন থাকে না, তাই এই সময়টা বেছে নিয়েছি ।”

এই সময়টা রিক্সা চালিয়ে সকল খরচ বাদে ৫০০ টাকার মত হাতে থাকে। তিনি বলছিলেন, তাঁর খরচের মধ্যে রিকশার জমা (ভাড়া) প্রতিদিন দিতে হয় ১০০ টাকা,আর খাওয়া-দাওয়া বাববদ খরচ হয় প্রায় ২০০ টাকা । তাঁকে হোটেলে খেতে হয়। কিন্তু থাকার জন্য তেমন কোন টাকা দিতে হয় না কেননা তিনি গ্যারেজের মধ্যেই থাকেন। তাঁর গ্যারেজের মহাজন সেখানে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এর বাইরে টুকিটাকি খরচ তো থাকেই, যেমন মাঝেমধ্যে রিকশা মেরামত করতে হয়।

কাজল মিয়া চালানো ছাড়াও মাস শেষে বাসাবাড়ি, অফিস বদল করার জন্য আসবাব-তৈজসপত্র পরিবহনের কাজও করেন। এজন্য তাঁ র একটি টিম রয়েছে। সেখানে সবাই রিক্সা চালায় কিন্তু মাসের শেষে তাঁরা বাসা বদলানোর কাজ করে থাকেন। তাই মাসের শেষের দুই চার দিন ভালো টাকা আয় হয়, এমনটাই বলছিলেন কাজল মিয়া।

কাজল মিয়ার একটি ছেলে একটি মেয়ে রয়েছে । তাঁর ছেলে এখন নবম শ্রেণীতে পড়ে। আর  মেয়েটি পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে। ধানের মৌসুমে ছেলে ও মেয়ে তাঁকে সাহায্য করে থাকে।

কাজল মিয়া গ্রামে ঢাকায় ছয় মাস ও বাড়িতে  ছয় মাস থাকেন। বর্ষায় তাঁদের এলাকায় চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, ফলে তেমন কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তাই এই সময়টা তিনি ঢাকা শহরে রিক্সা চালানোর কাজ করেন। অন্য সময় ধান চাষ করে থাকেন। তাঁর ধান দিয়ে সারা বছর সংসার চলে যায়, বলছিলেন কাজল।

এখন গ্যারেজ গুলো তে প্যাডেল চালিত রিক্সার চেয়ে ব্যাটারি চালিত রিক্সার সংখ্যা অনেক বেশি।  মিরপুর সহ পুরো ঢাকায় কয়েক লক্ষ ব্যাটারী রিক্সা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সাগর দেওয়ান দুটি ব্যাটারি-চালিত রিক্সা কিনে ভাড়ায় দিয়েছেন। পেশায় তিনি একজন চাকরিজীবী । প্রতিদিন দুটি ‍রিক্সা থেকে গড়ে ৯০০ টাকা পেয়ে থাকেন। এভাবে সাগর দেওয়ান এর মত আরো অনেকেই মোটর চালিত রিক্সা কিনে ভাড়ায় দিয়ে থাকেন

মোটর রিক্সায় রোজগার বেশি হয় বলে অল্প টাকা বেতনের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে অনেকে মোটর চালিত রিক্সার চালক হয়েছেন। তেমন একজন হলেন, হেলাল হোসেন। আগে তিনি ধোবি (কাপড় ধোয়া) ছিলেন। বেতন পেতেন পনেরো হাজার টাকা। কিন্তু এখন তিনি ব্যাটারির রিক্সা চালিয়ে ৪০০ টাকা জমা বাদে দৈনিক ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা তাঁর কাছে থাকে। তিনি আরো বললেন, রিক্সা  চালানোতে স্বাধীনতা আছে। এখানে বড় কোন বাধ্যবাধকতা নেই। স্বাধীন পেশা।

ঢাকা শহরে ব্যাটারী চালিত রিক্সা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজটও বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। শহরে যত সংখ্যক রিক্সা থাকা দরকার, তার চেযেও বেশি রিক্সা  আছে বলে অনেকে মনে করেন।  তাঁরা মনে করেন ব্যাটারি চালিত রিক্সা বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় এখন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা হচ্ছে বেশি। কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষার্থী এই ব্যাটারী চালিত রিক্সার সাথে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

 

 

আরও পড়ুন