ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মিরপুরে শখের পাখির মেলা

দরকার একটি স্থায়ী জায়গা

মো: নাঈম তালুকদার

প্রকাশ: ১১:২৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৩১, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিরপুরে শখের পাখির মেলা

ছবি: নাঈম তালুকদার।

 

ক্রমে বেড়ে চলেছে মিরপুর পাখির বাজারের ক্রেতা বিক্রেতার সংখ্যা। এখানে দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখি, মাছ, বিড়াল, খরগোশ নানা ধরনের সৌখিন পশুপাখি পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে মিরপুর শাহ আলী কলেজের পাশে এই হাট বসে। অনেক বছর ধরেই চলে আসছে এই পাখির হাটটি। এটি পাখির হাট নামেই পরিচিত।

শুক্রবার সকাল থেকেই ভিঁড় জমতে থাকে পাখি ও পশুপ্রেমীদের। রাস্তার দুই পাশে বিক্রেতারা তাদের পাখি বিক্রি করার জন্য বসে থাকেন। এই হাটটির জন্য কোন বিশেষ জায়গা এখন পর্যন্ত ঠিক করে দেয়া হয়নি। ফলে যে যার মত করে রাস্তার পাশে বসে তাদের পশু-পাখি বিক্রি করে থাকেন। সকাল ছয়টা থেকে রাত টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই হাটটি। এখানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই তাঁদের শখের পশুটি নিয়ে আসেন। অনেক দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন। কেউ বা বিক্রেতা আর কেউ ক্রেতা।  

ছবিটিতে যেিএক মায়ের পেছনে যে কিশোরটিকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ইয়াসিন। সে তার মা-বাবার সাথে হাটে এসেছে। ইয়াসিন তার বাবার কাছে আবদার ধরেছে তার একটি টিয়া পাখি লাগবে, কারণ সে টিয়া পাখির সাথে কথা বলতে পারবে । ইয়াসিন আজ মহা খুশি তার শখের পাখিটি আজ কিনবে তাই।

মিরপুর হাটে নানা ধরনের পাখি উঠে যেমন ম্যাকাও, গোল্ডেন ফিস, লাভ বার্ড, ক্যানারি এবং কাকাতুয়া, টিয়া আরও অনেক ধরনের পাখি। এছাড়াও বিড়াল ওঠে বিশেষ করে পার্সিয়ান বেঙ্গল জাতের। এগুলোর বয়স রংয়ের ধরন অনুযায়ী দাম আলাদা হয়ে থাকে। এখানে এমনও বিড়াল রয়েছে যার দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে, এই হাটে, সবচেয়ে বেশি ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে কবুতর । হরেক রকম বাহারি কবুতর ভিন্ন ভিন্ন দামে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। কবুতরের মধ্যে রয়েছে প্যান্ডেল কিং, পটার জে, কেবিন মেদনা, রেসার, লোটন ফিল ব্ল্যাক ইত্যাদি।

নানা ধরনের মাছ পাওয়া যায় একুরিয়াম সাজানোর জন্য। এর মধ্যে রয়েছে এঞ্জেল ফিস। ট্রেট ট্রেডা ক্যাটফিশ ইত্যাদি।

বাংলায় সৌখিনতা নিয়ে কিছু চমৎকার প্রবাদ রয়েছে।" শখের তোলা আশি টাকা" যার মানে হচ্ছে শখের পেছনে মানুষ অনেক টাকা খরচ করতে রাজি থাকে।  

অস্থায়ী হলেও কিছু স্থায়ী পাখির দোকার এখানে গড়ে উঠেছে। এমন একটি দোকানে বসেন মোঃ হিরা মিয়া। তিনি বিক্রি করেন বিশেষ জাতের তোতা লাভ বার্ড। সান ক্যানিউর ও আরো বিশেষ বিশেষ পাখি। হিরা বরছিলেন, তাঁর সান কনিউর বিক্রি শুরু হয় সর্ব নিম্ন ১৫,০০০ টাকা থেকে।  এটি মূলত উত্তর আমেরিকার একটি পাখি। অনেক সময় তিনি এই পাখি কিনেও রাখেন।

হাটে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর একজনের সাক্ষাৎ হয়। তিনি বেশ কিছু কবুতর নিয়ে রাস্তার পাশে বসেছিলেন। নাম তাঁর জুবায়ের হোসেন, থাকেন মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায়। তিনি মূলত কবুতরগুলো শখের বসে পালন করে থাকেন । বললেন, তাঁর কাছে প্রায় ২০০ থেকে আড়াইশো কবুতর। তিনি পালন করেন বিশেষত টেশন নামে এক বিশেষ কবুতর যার দাম লেতে গেলে আকাশচুম্বী, কারণ এই কবুতর দিয়ে বিশেষ এক খেলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।  এই রেসার কবুতর গুলো প্রতিযোগিতার জন্য বেশ উপযোগী। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জোড়া রেসার পাখি রয়েছে তাঁর। প্রায় ২০ বছরে ধরে তার বাসাযর ছাদে নানা ধরণের কবুতর পালন করে আসছেন তিনি। তিনবার তিনি তাঁর রেসার কবুতর দিয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছেন এককেবার এক লক্ষ টাকা করে। খেলার নিয়ম হলো, বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ তাঁর রেসার কবুতর নিয়ে আসেন একটি নিদিষ্ট স্থানে। তারপর, খেলার আয়োজকরা তাদের এই কবুতরগুলোর চোখ বেঁধে দেশের যে কোনো বিশেষ জায়গা থেকে টোকেন নাম্বার দিয়ে ওই প্রান্ত থেকে ছেড়ে দিবেন। ওই র মধ্যে যে কবুতর তাদের মালিকের আগে ফিরে আসতে পারবে, তারা বিজয়ী হয়।

হাটের দিনে এখানে লোকে লোকারন্য হয়ে ওঠে। এতে হেঁটে জাযগাটি পার হওয়াও মুশকিল হয়ে যায়। একজনের সাথে কথা বলে জানা গেল যে এই হাটের জন্য সিটি কর্পোরেশন বছরখানেক আগে স্থান পরিবর্তন-এর উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু তারপর আর বাস্তবায়ন হয়নি।

 

আরও পড়ুন