ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সুস্থ থাকার আসল রসায়ন

যথেষ্ট ভিটামিন ডি, কম ইনসুলিন শরীরকে পুরো সুস্থ রাখে

শহীদুল ইসলাম (মুকুল)

প্রকাশ: ০৯:৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যথেষ্ট ভিটামিন ডি, কম ইনসুলিন শরীরকে পুরো সুস্থ রাখে

প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।


 
আমাদের শরীরের ভেতরে অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রতিদিন কাজ করছে যেন আমাদের স্বাস্থ্য সূচকগুলো ঠিক থাকে। তার মধ্যে দুটি সূচক যথাঃ ফাস্টিং ব্লাড ইনসুলিন এবং ভিটামিন ডি শরীরের স্বাস্থ্য বোঝার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

যদি কারো ফাস্টিং ব্লাড ইনসুলিন ৫ বা তার নীচে থাকে, এর মানে হলো তার শরীর খুব অল্প ইনসুলিনেই রক্তের শর্করা সামলে নিতে পারছে। এটাই হলো ইনসুলিন সেনসিটিভিটি ভালো থাকার লক্ষণ। এই অবস্থায় ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার বা হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। শরীরের ভেতর যেন এক ধরনের সামঞ্জস্য তৈরি হয়, যেখানে অল্পেই ভারসাম্য ফিরে আসে।

অন্যদিকে, ভিটামিন ডি যদি ৫০ ng/mL বা তার বেশি থাকে, তখন সেটা বোঝায় আমাদের শরীর যথেষ্ট সূর্যালোক পাচ্ছে। ভিটামিন ডি-কে বলা হয় সূর্যের উপহার। এটি শুধু হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে না, ইমিউন সিস্টেমকেও শক্ত করে, প্রদাহ কমায়, এমনকি দীর্ঘস্থায়ী অনেক রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। শরীরের ভেতরে আলো জমা রাখার মতো কাজ করে ভিটামিন ডি।

এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, তা হচ্ছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা দিনের একটি লম্বা সময় না খেয়ে থাকা শরীরকে ইনসুলিন কম ব্যবহার করতে সাহায্য করে, ফলে ফাস্টিং ব্লাড ইনসুলিন আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে।

তাহলে প্রশ্ন আসে- এমন অবস্থায়ও কি অসুখ হতে পারে? উত্তর হলো, হ্যাঁ। একিউট রোগ যেমন ফ্লু, ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, কিংবা দুর্ঘটনা থেকে সৃষ্ট আঘাত- এসব যে কারোই হতে পারে। তবে পার্থক্য হলো, যাদের ইনসুলিন ও ভিটামিন ডি-এর মান প্রাকৃতিকভাবে ঠিক থাকে, তাদের শরীর প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে। অসুখ এলেও তা কাবু করতে পারে না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি কেউ প্রাকৃতিকভাবে ফাস্টিং ব্লাড ইনসুলিন ও ভিটামিন ডি-এর আদর্শ মাত্রা ধরে রাখতে পারেন, তবে শরীরের বাকি প্রায় সব স্বাস্থ্য সূচকও স্বাভাবিক থাকে। এই সূচকগুলো হলো: ব্লাড সুগার, ব্লাড কোলেস্টেরল, লিভার ফাংশন, কিডনি ফাংশন, ব্রেইন ফাংশন, কার্ডিয়াক ফাংশন, রেসপাইরেটরি ফাংশন, ব্লাড কাউন্ট এবং যাবতীয় হরমোনাল ব্যালান্স।

ভিটামিন ডি যথষ্ট থাকলে এবং ইনসুলিন (খালিপেটে) ৫ এর নিচে মধ্যে থাকলে উপরোক্ত সূচকগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই বলা যায়, যদি ইনসুলিন ও ভিটামিন ডি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে, তখন ঘনঘন এসব টেস্ট করার প্রয়োজনও আর হয় না।

শরীরের এই ভারসাম্য বজায় রাখার উপায়ও প্রাকৃতিক।

খাবারে চাই কম চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেশি শাকসবজি, ফল, মাছ, ডিম, ঘি, মাখন আর বাদাম। চাই নিয়মিত শরীরচর্চা। হাঁটা, দৌড়ানো, কিংবা সহজ ব্যায়াম। চাই প্রতিদিন রোদে শরীর ভেজানো আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক। চাই মনের প্রশান্তি, যাতে শরীর অযথা চাপের ভেতর না থাকে। প্রয়োজনে সচেতনভাবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা যেতে পারে।

সারকথা হলো, প্রকৃতির ছন্দে জীবনযাপন করলে শরীরের ভেতরে তৈরি হয় শক্ত ভিত। এই ভিত শুধু রোগ থেকে রক্ষা করে না, বরং আমাদের জীবনের ভেতরে এনে দেয় প্রশান্তি আর প্রাণশক্তির আলো।  (শহীদুল ইসলাম, মুকুল, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক)

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন