শিরোনাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২:০৬, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রতীকি ছবি। বাসস।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আজ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস ক্রিস পাপেইজর্জিউ বলেন, বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিদেশ নির্ভরতা কমাতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশটির সরকার রাজস্ব ও আর্থিক নীতি উভয়ই কঠোর করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গত মে মাসে শুরু হওয়া বিনিময় হার সংস্কারের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে, রিপোর্ট বাসসের।
ক্রিস পাপেইজর্জিউর নেতৃত্বে আইএমএফ-এর একটি মিশন দল ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফরকালে অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতিমালাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে।
পাপেইজজিউ তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের শুরুতে মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের স্তর থেকে নেমে অক্টোবরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, দুর্বল কর রাজস্ব এবং আর্থিক খাতে মূলধনের ঘাটতির কারণে অর্থনীতি এখনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন, যাতে একটি সহজ ও ন্যায্য কর পরিবেশ গড়ে তোলা যায় এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা যায়। এসব নীতি দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়িত হলে ২০২৬ ও ২০২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৮.৮ শতাংশে থাকতে পারে, যা ২০২৭ সালে কমে ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে। রাজস্ব ও ব্যাংকিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিলম্বিত বা অপর্যাপ্ত নীতিগত পদক্ষেপ প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে এবং সামষ্টিক-আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশাব্যঞ্জক কর সংস্কার জরুরি, যাতে পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়যা সামাজিক ব্যয় ও অবকাঠামো বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে এবং একটি শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করবে।’
সম্ভাব্য সংস্কারের মধ্যে রয়েছে—কম হারে ভ্যাট বাতিল করা, প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার বাইরে অন্যান্য ছাড় তুলে নেওয়া এবং সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম টার্নওভার কর হার বৃদ্ধি করা। এসব সংস্কার কার্যকর করতে কর প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি অর্থ ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং ভর্তুকি সীমিত করে আর্থিকভাবে টেকসই পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে সম্পদের পুনর্বিন্যাসে সহায়তা করবে, যার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়ানো সম্ভব হবে। এসব সংস্কার সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব পরিসর তৈরি করবে, যা ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক খাত সংস্কার জরুরি।’
আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপেইজর্জিউ বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে একটি বিশ্বাসযোগ্য, কৌশল প্রয়োজন, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে-ব্যবস্থাপনার ঘাটতির পরিমাণ নিরূপণ, আর্থিক সহায়তার পরিসর এবং আইনি ভিত্তিসম্পন্ন পুনর্গঠন ও সমাধান পরিকল্পনা, যার জন্য নির্ধারিত অর্থায়নের উৎস থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, “অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ সম্প্রসারণ করে তা সব গুরুত্বপূর্ণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করতে হবে। ব্যাংকগুলোর সুশাসন, ব্যালেন্স শিটের স্বচ্ছতা, আর্থিক নিরাপত্তা বলয় এবং অ-সম্পাদিত ঋণ পুনরুদ্ধারের কাঠামো উন্নয়নে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় এমন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা সুস্থ ব্যালেন্স শিট, টেকসই মুনাফা এবং পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করবে-দীর্ঘমেয়াদি ছাড়ের ওপর নির্ভর না করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপরই কেন্দ্রীভূত থাকা উচিত। মূল্যস্ফীতির ধীরগতির পতন ইঙ্গিত দেয় যে, ৫-৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় ফিরে না আসা পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখা প্রয়োজন। নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে, যার মধ্যে নমনীয়তা বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত। মুদ্রানীতির কার্যকারিতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে অপ্রচলিত মুদ্রা ও আধা-রাজস্ব কার্যক্রম ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সুশাসন উন্নয়নে অগ্রগতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের মানোন্নয়ন নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নকে আরও কার্যকর করবে।’
তিনি জানান, আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা নিয়ে আলোচনা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। ‘
‘বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আইএমএফ একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন মিশন প্রধান।
আইএমএফ দল বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অংশীজনদের আন্তরিকতা ও খোলামেলা আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। তারা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া, বেসরকারি খাত, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গেও আলোচনা করেন।