শহিদুল ইসলাম (মুুকুল)
প্রকাশ: ২০:৪০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:২১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।
মানুষ পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যে আনন্দে কাঁদে, দুঃখে কাঁদে, আবার কখনো কৃতজ্ঞতায় কিংবা ভক্তিতেও কাঁদে।
অশ্রুজল যেন হৃদয়ের নীরব ভাষা। মুখের কথা থেমে গেলে, চোখের জল তখন সমস্ত অনুভূতিকে প্রকাশ করে।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সব অশ্রুজল কি এক রকম?
উত্তর হলো- না। চোখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি ফোঁটা জলের পেছনে আলাদা গল্প আছে, আলাদা রসায়ন আছে।
আমাদের চোখ সবসময় আর্দ্র থাকে কারণ কর্নিয়াকে রক্ষা করার জন্য চোখে তৈরি হয় Basal tears। এগুলোতে থাকে পানি, লবণ, এনজাইম ও প্রোটিন- যা চোখকে জীবাণুমুক্ত রাখে।
যখন ধোঁয়া, পেঁয়াজ বা ধূলা চোখে ঢোকে, তখন বের হয় Reflex tears। এগুলোতে পানি বেশি, উদ্দেশ্য একটাই-বিষাক্ততা বা অশুদ্ধি ধুয়ে ফেলা।
কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো Emotional tears। যখন আমরা আনন্দে, দুঃখে, শোকে, ভালোবাসায়, বা হতাশায় কাঁদি, তখন চোখ থেকে যে জল ঝরে, তা কেবল পানি নয়। এতে থাকে স্ট্রেস-হরমোন (যেমন ACTH, cortisol), থাকে প্রোল্যাক্টিন, ম্যাঙ্গানিজ, এমনকি প্রাকৃতিক পেইনকিলার এন্ডরফিনও।
অর্থাৎ আবেগের কান্না শরীর থেকে চাপ কমায়, মনকে হালকা করে, স্নায়ুকে শান্ত করে। এ কারণেই মানুষ কেঁদে ফেলার পর প্রায়ই বলে- এখন বুকটা হালকা লাগছে!
মানুষের কান্না বহুমুখী।
শারীরিক ব্যথার কান্না- এতে থাকে ব্যথা-সংক্রান্ত রাসায়নিক, যা শরীরকে বিপদের সংকেত দেয়।
হতাশার কান্না- এতে ঝরে পড়ে কর্টিসল যা কিনা মানসিক চাপের ছাপ।
একাকিত্বের কান্না- এতে জড়িয়ে থাকে অক্সিটোসিন, সেই হরমোন যা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে, বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি করে।।
আনন্দের কান্না- এখানে থাকে এন্ডরফিন ও সেরোটোনিন, যেন অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসকে সামলে নেওয়ার এক স্বাভাবিক পথ।
ভক্তি বা আধ্যাত্মিক কান্না- এতে জাগে স্নায়বিক প্রশান্তি, ডোপামিন আর সেরোটোনিনের প্রবাহ।
এমনকি শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীত বা প্রকৃতির সৌন্দর্যে যে অশ্রু ঝরে, তা-ও আলাদা। গবেষকরা একে বলেন Aesthetic tears- সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের গভীর সাড়া।
চোখের জল কেবল লবণাক্ত পানি নয়, এটি হৃদয়ের কবিতা।
প্রতিটি ফোঁটা অশ্রু আমাদের ভিতরের গল্প বহন করে। কখনো ব্যথার, কখনো ভালোবাসার, কখনোবা মুক্তির।
বিজ্ঞান বলে, এই অশ্রুজলে রাসায়নিক বার্তা আছে; সাহিত্য বলে, এতে আত্মার আর্তি আছে।
অশ্রুজল তাই শুধু চোখের নয়, মানুষের অস্তিত্বেরও প্রতীক।
এটি প্রমাণ করে, মানুষ কেবল যুক্তির প্রাণী নয়, আবেগেরও প্রাণী।
এ কারণেই আমরা কাঁদি- হাসতে হাসতে, কাঁদি শোকে, কাঁদি একাকিত্বে, কাঁদি ভালোবাসায়।
প্রতিটি কান্নাই যেনো একেকটি জীবন্ত কাব্য। (লেখক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক)