ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

নিয়মের তোয়াক্কা নেই, বেপরোয়া অটো রিক্সার দখলে ঢাকার সড়ক

মোহাম্মদ নাঈম হোসেন তালুকদার

প্রকাশ: ২১:১৭, ৪ অক্টোবর ২০২৫

নিয়মের তোয়াক্কা নেই, বেপরোয়া অটো রিক্সার দখলে ঢাকার সড়ক

আগার গাঁও মেট্র স্টেশনে বিশৃঙ্খলভাবে পার্ক করা অটো-রিক্মা। ছবি: মোহাম্মদ নাঈম হোসেন তালুকদার।

 

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রধান সড়কগুলোতে এখন ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা এক চলমান আতঙ্কের নাম। একসময় শুধু পাড়া মহল্লায় অলিগলিতে চলাচল করত এই অনুপোযুক্ত যানবাহনগুলো । এখন, এসব বাহন মূল সড়ক দখল করে ট্রাফিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

পুলিশ প্রশাসন এই বেপরোয়া যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করছেন । কারণ এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার মতো তেমন কোন কার্যকরী আইন নেই। অটো রিক্সা যথেচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচল নগর জীবনে নানা সমস্যা তৈরি করছে বলে অনেকে মনে করেন।  

সংশ্লিষ্টদের মতে মূলত স্বল্প খরচ এবং দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সুবিধার কারণে এই অটো রিক্সাগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে, কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় এবং ঢাকার রাস্তা ও ট্রাফিক সম্পর্কে ধারণা না থাকায় প্রায়ই যাত্রী, চালক ও অন্যান্যরা নানা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

এক হিসেবে দেখা যায, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩০টি। উত্তর সিটিতে ২৮ হাজার ১৫২টি। নিবন্ধিত ২ লাখ ১০ হাজার ৭০০ রিকশার সবই প্যাডেলচালিত। এর বাইরে রাজধানীতে সব রিকশাই অনিবন্ধিত। ঢাকা শহরে ব্যাটারি-চালিত রিকশার সংখ্যা ঠিক কত, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে অনেকের অনুমান, সেই সংখ্যা ৮-১০ লাখের মতো।

ট্রাফিক পুলিশদের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে এই অটো রিক্সা গুলো খেয়াল খুশিমতো চালানো হচ্ছে। চালেকরা কোন ট্রাফিক সিগন্যাল মানতে নারাজ। সুযোগ পেলেই ফুরুৎ করে লেন পরিবর্তন করে মোটর ও অন্যন্য দ্রুত-গতির যানবাহনের সামনে চলে আসে।

পরিবহনের বিশেষকদের দেওয়া তথ্য মতে সাম্প্রতিক সকল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৬৬ ভাগ কোন না কোন ভাবে অটো রিস্কার সাথে জড়িত।

মান্নান হোসেন আগে অটো রিকশা চালাতেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একদিন সকালে অটো রিক্সা চালানোর সময় তার গতিছিল ৫০ কিলোমিটারের বেশি। খালি সড়কে চলছে তার গাড়ি আর হঠাৎই একটি প্রাইভেট কারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ । চালক মান্নান হোসেন এই দুর্ঘটনার ফলে  পঙ্গুত্ববরণ করেন। চিকিৎসার জন্য তাকে অনেক ধার কর্জ করতে হয়েছিল। এখন তিনি সুস্থ কিন্তু স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না । আর তাই একটি বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কর্মরত আছেন।

অটো রিকশা সংখ্যা একটাই বেড়েছে যে একজন যাত্রীকে দেখলে ৫- টি অটো এসে তাঁকে ঘিরে ধরে। যাত্রী তোলা ও যাত্রী নামানো হয় যত্রতত্র। এতে করে সড়কে তৈরি হয় জ্যাম  

সরকারি চাকরির প্রত্যাশী মোঃ হাসিবুর রহমান প্রতিদিনের ন্যায় একদিন কোচিং করতে আগারগাঁ যান মেট্রোরেল দিয়ে। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় মেট্রোরেলের গেটের সামনে বিশৃঙ্খল অটো রিক্সাগুলোর কোন একটি তাঁকে ধাক্কা দেয়।  

এখন প্রায় প্রতিটি মেট্রোরেলের গেটের সামনে অটো রিক্সা যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয়। এতে করে যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং রাস্তা পারাপারে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ট্রাফিক বিভাগ স্বীকার করছে যে, বিদ্যমান আইনে এসব অনিয়ন্ত্রিত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অনেক দূরের বিষয়, এসব চালকের নেই কোন লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ । এর ফলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেমন দুর্বলতা রয়েছে তেমনি জনগণের মধ্যে এই এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে ব্যবহারের প্রবণতা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অটো রিক্সার অনিয়ম কমানো বা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আইন তৈরির পাশাপাশি জনসাধারণকে সচতন করে তুলতে হবে। একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করে এসব বাহনকে প্রধান সড়কে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা দরকার। পাশাপাশি, জনসাধারণকে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যথায়, ভবিষ্যতে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করবে।  

এই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দূর করতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন নগরবাসী।

আরও পড়ুন