মো: নাইম হোসেন তালুকদার
প্রকাশ: ১৫:৫২, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৪৫, ২১ আগস্ট ২০২৫
আবুল হোসেন (৫০) শব্জি বিক্রি করছেন। ছবি: লেখকের।
আগে তিনি ছিলেন একজন গরুর ব্যাপারী। আবুল হোসেন (৫০) তাঁর নাম। আবুল হোসেন থাকেন সাভারের আখরাইন নামক একটি গ্রামে। প্রতিনিয়ত গরু বেচাকেনা করতেন। সেসময়, এমনও দিন গেছে যে দিনে তিনি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। গরুগুলো তিনি কিরতেন সাভারের বিভিন্ন গ্রামের গৃহস্থলীর বাসা থেকে আর বিক্রি করতেন বিভিন্ন হাটে, বিশেষত গাবতলীতে। তিনি জানান, ঈদের মৌসুমগুলোতে অনেক লাভ করতেন তিনি। তাছাড়া সাধারণ দিনগুলোতে গরু প্রতি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ থাকতো। শুধু যে গরু ব্যবসায় লাভ হয় তা না, কখেনও কখনও ক্ষতিও হতো। তিনি বললেন, যখন গরু কিনে গোয়াল ঘরে রাখতেন তখন সেগুলোকে একটু বেশি স্বাস্থ্যবান দেখাতো । কিন্তু এক দুইদিন রাখার পর সামান্য হলেও গরুর চেহারা একট মলিন হয়ে যেত। তখন একটু কম দামে বিক্রি করতে হতো। এই যে লাভ-ক্ষতির বিষয়, তা তিনি মেনেই নিয়েছিলেন। “প্রথম পর্যায়ে ক্ষতি হলে পরে আমি উন্নতি করে তা পুষিয়ে নিতাম,“ তিনি বলেন। তাঁর ব্যবসা এবং সংসার ভালই চলছিল।
কিন্তু আপদ ঘটে একদিন। বছর কয়েক আগে একদিন ৪ টি গরু কিনে সেগুলো তাঁর বাসার গোয়ালে রেখেছিলেন। ওগুলো পরদিন সকালে গাবতলী হাটে বিক্রি করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাতে গরুগুলো চুরি হয়ে যায়! এটি তার জন্য চরম একটি ধাক্কা ছিল। হাতের সকল টাকা শেষ হয়ে যায় এক সময়। টাকার সংকটে পড়েন তিনি। আবুল হেসেনের ঘুরে দাঁড়ানোর পরিস্থিতি ছিল না। তার সকল টাকা দিয়ে গরুগুলো কিনেছিলেন। এক রাতেই শেষ হয়ে যায় তার এই লাভজনক ব্যবসাটি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি এখন দুয়ারীপাড়ার বাজারে সবজি বিক্রি করেন।
আবারও গরুর ব্যবসা করবেন কি না এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন গরু কেনা বেচার ব্যবসা তিনি আর করবেন না। কেননা, এই ব্যবসায় যেমন লাভ হয় তেমনি ক্ষতিও হয় এবং এই ব্যবসায় খুব কষ্ট, দিনরাত কাজ করতে হয়। এখন তিনি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে অথবা পাইকারি বাজার থেকে নানা ধরনের সবজি কম দামে কিনে আনেন। আর দুয়ারী পাড়ার ওয়েস্টার্ন হাউজিং এ অল্প কিছু লাভে বিক্রি করেন। এখন প্রতিদিন তাঁর মূলধন হলো প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা । পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর সবজিগুলো কয়েকজন মিলে একটি মিনি ট্রাক ভাড়া করে দুয়ারীপাড়ায় বাজারে আনেন। এতে প্রত্যেকজনের প্রায় আড়াইশো টাকা খরচ হয়।
কেন এই ব্যবসায় আসলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা একটা স্বাধীন ব্যবসা এবং মূলধন কম হলেও সংসার চলে যায়। আগের ব্যবসা থেকে কষ্ট অনেক কম। তিনি সবজিগুলো পাইকারি বাজার থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেন এবং তা নিয়ে দুয়ারীপাড়া বাজারে আসেন এবং আনুমানিক দুপুর একটা থেকে দুইটার মধ্যে তার সকল সবজি বিক্রি হয়ে যায়। এগুলো বিক্রি করে দিনে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ থাকে।
এই যে ব্যবসা করেন, এতে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল ব্যবসাতেই কম বেশি বাধাবিপত্তি আছে। এই ব্যবসাতেও বাধা বিপত্তি আছে। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেই বাজার থেকে পাইকারি সবজিগুলো তিনি কেনেন, সেখানে যখন বড় পাইকাররা যখন সবজি কেনেন, তখন তাঁরা অবহেলার শিকার হন। বড় পাইকারী ব্যবসায়ী চলে গেলে তাঁদের একটু বেশি দামে সবজি কিনতে হয়। তাছাড়া বসার স্থান নিয়ে কিছুটা বাধা থাকে কিন্তু এখন তেমনটা হচ্ছে না।
তাঁরা চার ভাই ও এক বোন। তিনি পরিবারের চতুর্থ সন্তান। কয়েক বছর আগে তাঁর মা মারা গেছেন । তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর সাথেই থাকতেন তার মা। আবুল হোসেনের একটি ছোট সংসার আছে । তাঁর একটি মাত্রই সন্তান সে এখন কেজি শ্রেণীতে পড়ে।