ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০:২৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান ছন্দ-বদ্ধ শব্দকে ছাপিয়ে মানুষের তৈরি শব্দ (যেমন ট্র্যাফিক, শিল্পকারখানা, যন্ত্রপাতির শব্দ) ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শহরের প্রসার, আন্তর্জাতিক পরিবহন এবং সম্পদ আহরণের কারণে গত কয়েক দশকে এই শব্দের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই ক্রমবর্ধমান কোলাহল বন্যপ্রাণীর ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
মানুষের তৈরি শব্দে কিছু প্রাণী নিজেদের গান বা ডাক পরিবর্তন করে। কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির পাখি, যেমন মকিংবার্ড, ব্ল্যাকবার্ড এবং কাকাতুয়া মানুষের তৈরি শব্দের অনুকরণ করতে পারে। তারা গাড়ির অ্যালার্ম, ফোন রিংটোন এবং নির্মাণ কাজের শব্দের মতো আওয়াজ তাদের গানের তালিকায় যুক্ত করে। জার্মানির গবেষকরা মনে করেন, ব্ল্যাকবার্ডের ইলেকট্রিক স্কুটারের অ্যালার্মের অনুকরণ করা তাদের প্রজননে সুবিধা দিতে পারে। পুরুষ লাইয়ারবার্ডও গাড়ির অ্যালার্ম এবং অন্যান্য শব্দের অনুকরণ করে প্রজননের জন্য। তবে, এই পরিবর্তনগুলো প্রাণীদের জন্য কেবল আংশিক স্বস্তি আনে, যা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান করে না, রিপোর্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্রের িস্মিথসোনিয়ান ম্যগাজিন।
প্রাকৃতিক শব্দে ভারসাম্য রক্ষা করা প্রাণীদের জন্য মানুষের শব্দ সমস্যা তৈরি করে। যেমন, ট্র্যাফিকের শব্দের কারণে ব্যাঙেরা উচ্চ কম্পাঙ্কে ডাকে। বাদুড় শব্দে প্রতিধ্বনি (echolocation) করার কৌশল পরিবর্তন করে, যেন তারা নিজেদের শব্দ শুনতে পায়।
সমুদ্রের নিচের পরিবেশও মানুষের তৈরি শব্দে প্রভাবিত হচ্ছে। জাহাজ চলাচল, তেল উত্তোলন এবং সোনারের মতো উৎস থেকে আসা শব্দ সামুদ্রিক প্রাণীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করে। ডলফিন, মাছ এবং তিমিরা একে অপরের সঙ্গে শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষের কোলাহলে তাদের শব্দ চাপা পড়ে যায়। এর ফলে তারা শিকার বা শিকারীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের খাদ্য গ্রহণ এবং প্রজননে প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, মানুষের শব্দের কারণে হাতি এবং হরিণের মতো স্থলচর প্রাণীরা আতঙ্কিত হয়ে স্থান ত্যাগ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভয় পাওয়া শিকারী।
মানুষের তৈরি শব্দ প্রাণীদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। এটি প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, তাদের রোগ ও পরজীবীর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। কিছু পাখির কোষে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে এবং তাদের জীবনকাল কমে যায়। সামুদ্রিক প্রাণী যেমন সিল মাছ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী শ্রবণ ক্ষতির শিকার হয়। দীর্ঘমেয়াদী কোলাহলে তরুণ প্রাণীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়। এটি তাদের শেখার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং গান গাওয়ার দক্ষতা কমিয়ে দেয়।
বর্তমানে অতিরিক্ত শব্দের প্রভাব থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু আইন থাকলেও, প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য তেমন কোনো আইন নেই। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের নিচের শব্দ কমানোর জন্য নিয়ম চালুর আহ্বান জানাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন জাহাজগুলোর শব্দ কমানোর জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, যা নতুন প্রপেলার এবং শান্ত যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।