ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মত ভেটো প্রয়োগ

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিল

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১:১০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিল

প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।

 

ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে আনা একটি প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে গাজা যুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ষষ্ঠবারের মতো ভেটো দিল। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে এটি পাস হতে পারেনি, রিপোর্ট ইউরো নিউজের।

প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলের প্রতি গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটিতে হামাসের নিন্দা জানানো হয়নি বা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘে মার্কিন দূত মরগান ওরটাগাস ভোটের আগে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করাটা অপ্রত্যাশিত নয়।” তিনি আরও বলেন, “এতে হামাসের নিন্দা করা হয়নি বা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এটি হামাসের পক্ষে থাকা ভুল বর্ণনাগুলোকে বৈধতা দেয়, যা দুঃখজনকভাবে এই পরিষদে প্রচলিত।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের "অগ্রহণযোগ্য" ভাষার বিষয়ে সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে একটি “প্রদর্শনমূলক পদক্ষেপ” গ্রহণ করেছে, যা ভেটো দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। মনসুর বলেন, “আমি ফিলিস্তিনি জনগণের রাগ, হতাশা এবং দুঃখ বুঝতে পারি, যারা হয়তো এই নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন দেখছেন এই আশায় যে কিছু সাহায্য আসছে এবং এই দুঃস্বপ্ন শেষ হতে পারে।” তিনি যোগ করেন, “আমি কল্পনা করতে পারি যে এটি না ঘটায় তাদের রাগ ও হতাশা কতটা।”

এই ভোটটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন কয়েক দিন পরই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের বার্ষিক সমাবেশ শুরু হচ্ছে, যেখানে গাজা একটি প্রধান বিষয় হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্রদের অনেকেই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি অনেকটা প্রতীকী হলেও, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র বিরোধিতা করে থাকে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেক আমেরিকান মনে করেন যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়া "বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে”। এমন পরিস্থিতিতেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে ভেটো দিল।

সর্বশেষ প্রস্তাবনা: যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি
নিরাপত্তা পরিষদের দশটি নির্বাচিত সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা তৈরি এই প্রস্তাবনাটি আগের সংস্করণগুলোর চেয়ে আরও বেশি বিস্তৃত ছিল। এতে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের "গভীরতর দুর্ভোগ" এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

এই প্রস্তাবে আগের সংস্করণগুলোর দাবির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল, যার মধ্যে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলার পর থেকে তাদের হাতে আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ছিল, যা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়।

নভেম্বর থেকে এ ধরনের প্রস্তাবগুলোর বিরোধিতাকারী যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে আসছিল যে, যুদ্ধবিরতিসহ অন্যান্য দাবিগুলো সরাসরি জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির সঙ্গে যুক্ত নয় এবং এটি কেবল হামাস জঙ্গিদের আরও উৎসাহিত করবে।

বিশ্বের খাদ্য সংকট বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষের গত মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পর নতুন প্রস্তাবনায় "গভীর উদ্বেগ" প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গাজা শহর দুর্ভিক্ষে কবলিত হয়েছে এবং যদি যুদ্ধবিরতি না হয় ও মানবিক সহায়তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া না হয়, তাহলে এই দুর্ভিক্ষ পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন