ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

দূর্গাপূজার কেনাকাটা নিয়ে হিন্দু গ্রাহক বিপাকে

‘ফকিরা’ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে এক্সিম ব্যাংক

৫০ হাজার টাকার চেকের বিপরীতে দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকা মাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:৩৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৪২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ফকিরা’ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে এক্সিম ব্যাংক

এক্সিম টাওয়ার, গুলশান। ছবি: কোম্পানি ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।


‘ফকিরা’ একটি ব্যাংকে পরিণত হয়েছে এক্সিম ব্যাংক। ঢাকার বেশিরভাগ শাখাতে এক্সিম ব্যাংকের লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। একাউন্টধারীদের বলে দেয়া হচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বরের আগে তাঁরা যেন ব্যাংকমুখী না হন।

একাউন্টধারীদের ৫০ হাজার টাকার চেকের বিপরীতে মাত্র ৩ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই প্রতিবেদককে কাজী নজরুল ইসলাম এভেন্যু শাখার পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, :”আপনি এখন কোন টাকা আমাদের ব্যাংকে ঢোকাবেন না। কারণ আমরা আপনাকে কোন টাকা দিতে পারব না। “

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাঁদের একাউন্ট এখানে রয়েছে তাঁরা বড় বিপদে পড়েছেন। দূর্গাপূজার কেনাকাটা করার জন্য কোন টাকাই তারা ব্যাংকটি থেকে পাচ্ছেন না। এ নিয়ে কাকে অভিযোগ করবেন সেটিও বুঝার উপায় নেই।

সরকার বলছে, এক্সিম সহ দূর্বল পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া চলছে। এক্সিম ব্যাংকের কোন বুথে টাকা নেই। এই প্রতিবেদক মতিঝিল, দিলখুশা, পল্লবী সহ নানা স্থানে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই প্রতিবেদকের ঘনিষ্ট একজন আত্মীয়া বেশ কিছু টাকা এই ব্যাংকটির একটি শাখায় সঞ্চয়ী হিসেবে রেখেছিলেন। তাঁর টাকাগুলো একাধিক ইলেকট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভিন্ন একটি ব্যাংকে নেয়ার উদ্যোগ নিলেও সেগুলো সেটল্ড হয়নি। তিনি গতকাল ৫০ হাজার টাকার একটি চেক পাঠিয়ে মাত্র তিন হাজার টাকা পেয়েছেন।

লোকজন প্রশ্ন করছেন, একাউন্ট-পেয়ী চেকের বিপরীতে টাকা দিতে পারছে না কেন এই ব্যাংকটি। এদের চলতি হিসাব একাউন্ট চালানোর জন্য কোন টাকাই কি নেই? এটি কি করে সম্ভব? শুধু কি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বসিয়ে রেখে এঁরা মাছি মারার কেরানী হয়েছেন?  

আরও প্রশ্ন আছে। প্রথমত: কোন চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর যদি দূর্বল হয়ে যায়, অথবা কোন বাস কোম্পাানি পথে বসার উপক্রম হয়, তাহলে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে? তারা কি মার্জ করতে পারবে? অর্থনীতির (ক্যাপিটালিস্ট বা ফ্রি মার্কেট ইকোনমি) নিয়ম অনুযায়ী বাজারে টিকতে না পারলে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। আবার নতুন উদ্যোক্তা বাজারে প্রবেশ করবে। তবেই তাকে আমরা ফ্রি মার্কেট ইকোনমি বলব। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক খোলার এবং ব্যাংক থেকে টাকা লুটের একটি নিয়ম চালু হয়েছে। এটি কি করে বন্ধ করবে সরকার, তার কোন উত্তর নেই।

গতকাল এক সংবাদে বলা হয়েছে: সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য বোর্ড সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই প্রশাসক নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হবে, রিপোর্ট ইউএনবি’র। তিনি জানান, এ প্রক্রিয়া সহজ করতে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ও সহায়ক আইনসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি চারজন কর্মকর্তার সহায়তায় দায়িত্ব পালন করবেন। আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা এবং ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন