ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০:৫২, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫৪, ২১ অক্টোবর ২০২৫
প্রতিনিধিত্বশীল ছবি। সংগৃহীত।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সোমবার নিশ্চিত করেছে যে ইউরোপ থেকে ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবাসনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সাথে পরীক্ষামূলক যোগাযোগ শুরু করেছে।
ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশের পক্ষ থেকে ব্রাসেলসকে কাবুল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানোর পরই এই স্বীকারোক্তি এলো।
ইইউ নির্বাহী বিভাগের মুখপাত্র মার্কাস ল্যামার্ট ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেন যে, ইউরোপীয় কমিশন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে কাজ করছে, রিপোর্ট করেছে রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল।
তিনি বলেন, "চলতি বছরের শুরুতে, আমরা আফগানিস্তানের 'কার্যত কর্তৃপক্ষের' (de-facto authorities) সাথে প্রযুক্তিগত স্তরে পরীক্ষামূলক যোগাযোগ শুরু করেছি।"
২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে কঠোর ইসলামী আইন প্রয়োগ করায় তারা আন্তর্জাতিক মহলে বহুলাংশে একঘরে হয়ে আছে।
কিন্তু বেলজিয়ামের উদ্যোগে লেখা একটি চিঠিতে, ২০টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আফগান নাগরিকদের যারা ইউরোপে থাকার অধিকার রাখেন না, তাদের স্বেচ্ছায় এবং জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন সক্ষম করার জন্য কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
বেলজিয়ামের অভিবাসন মন্ত্রী অ্যানেলিন ভ্যান বসুইট এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা অনিয়মিত আফগান নাগরিকদের, এমনকি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও, ফিরিয়ে দিতে পারছি না। এটি আশ্রয় নীতিতে জনআস্থাকে ক্ষুণ্ন করছে এবং আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে। ইউরোপের জন্য এখন একসাথে কাজ করার সময়।"
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ
অন্যান্যদের মধ্যে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, গ্রীস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড এবং সুইডেন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
এদের বেশিরভাগই ইইউ দেশগুলোর এমন একটি গোষ্ঠীর সদস্য, যারা অভিবাসনের উপর আরও ব্যাপক কঠোরতা আরোপের দাবি জানাচ্ছে। কারণ, জনমত পরিবর্তনের ফলে এই জোটজুড়ে কট্টর-ডানপন্থী দলগুলোর নির্বাচনী লাভ বেড়েছে।
ইইউ-এর তথ্য: প্রত্যাবাসনের নির্দেশপ্রাপ্তদের মাত্র ২০ শতাংশকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তথ্য অনুসারে, ২৭টি দেশের এই জোট থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম ব্যক্তিকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সুইডেনের অভিবাসন মন্ত্রী জোহান ফোরসেল গত সপ্তাহে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইইউ সদস্যরা আফগানদের প্রত্যাবাসনের জন্য সম্পদ একত্রিত করতে পারে।
তিনি বলেন, "আফগানিস্তানে যৌথ বিমান যেতে পারে," এবং যোগ করেন যে ইইউ-এর একটি দল কাবুলে প্রযুক্তিগত আলোচনা চালাচ্ছে। ফোরসেল আরও বলেন, "আমাদের এখানে অভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।"
ইইউ আফগানিস্তানে তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখলেও, মানবিক সহায়তা সহ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যোগাযোগ সীমিত ছিল।
ব্রাসেলসের কূটনৈতিক পরিষেবা তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে যে এই যোগাযোগ তালেবান সরকারকে কোনো বৈধতা (legitimacy) প্রদান করে না।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবান দেশটির বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) নারী কর্মীদের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
তালেবান সরকার সমস্ত এনজিওকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল যে, এটি এনজিওগুলিতে কর্মরত "মহিলাদের" দ্বারা "ইসলামী হিজাব (মাথার স্কার্ফ) মেনে না চলার" কারণে করা হয়েছে।
এই নির্দেশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এনজিওগুলির অপারেটিং লাইসেন্স স্থগিত করার হুমকি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
তালেবান নেতৃত্ব কিশোরী মেয়েদের হাই স্কুলে নিষিদ্ধ করার পরে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। এছাড়াও, নারীদের সরকারি চাকরি থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।