মো: নাঈম হোসেন তালুকদার
প্রকাশ: ০৯:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
মিরপুর এক নম্বর সার্কেলের কলেজ মার্কেট। ছবি: নাঈম হোসের তালুকদার।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিপুল উৎপাদনের একটি অংশ, যা নানা কারণে শিপমেন্ট বাতিল বা অবশিষ্ট থাকে, তা সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে মিরপুর-১ এর হযরত শাহ আলী কলেজ শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে অবস্থিত বিশাল এই পাইকারি বাজারটি।
ক্রেতাদের কাছে যা এক নামে এক্সপোর্ট মার্কেট বা 'কলেজ মার্কেট' নামে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা পোশাক ব্যবসায়ীদের কাছে এটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র।
এই মার্কেটে সরাসরি গার্মেন্টস থেকে নামানো এর পোশাক পাইকারি দামে পাওয়া যায়। দুই বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-যুবক, প্রবীণ—সকল বয়সের ছেলে ও মেয়েদের সকল ধরনের জামাকাপড় এখানে মজুত থাকে। বিশেষ করে, শীতের কাপড় থেকে শুরু করে টি-শার্ট, প্যান্ট, শার্ট এবং ভারী পোশাকের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। একে বলা যেতে পারে মিরপুরের ‘বঙ্গবাজার’।
মূলত ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য তৈরি করা পোশাক যা নানাকারণে শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যায়, তা এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
যেহেতু ডিজাইনগুলো আমদানিকারক কর্তৃক দেয়া, তাই এগুলো নান্দনিকও বটে।
বিদেশি ব্র্যান্ড যেমন ব্লু, অ্যাডিডাস, ঈগল ও ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ডের পোশাক এখানে অবিশ্বাস্য কম মূল্যে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দামের এবং কোয়ালিটির প্যান্ট সহ কিছু 'বি গ্রেডের' পণ্যও মজুত থাকে।
ক্রেতাদের কাছে এই মার্কেটের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এখানে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের জন্য তৈরি করা এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পোশাক, যা শিপমেন্ট বাতিল বা অবশিষ্ট থাকে, তা পাওয়া যায়।
ব্র্যান্ড ও মূল্য: ব্লু, অ্যাডিডাস, ঈগল সহ অন্যান্য ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ডের পোশাক এখানে কম দামে ভালো মানের কারণে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
নিয়মিত ক্রেতা মোঃ হাসিবুর রহমান জানালেন, "বাইরে ভালো মানের টাউজার বা প্যান্ট কিনতে গেলে অনেক দাম পড়ে যায়। কিন্তু এখানে একটু খুঁজে নিলে ভালো মানের এবং টেকসই জামাকাপড় অল্প দামে পাওয়া যায়, যা বাজারের অন্য কোথাও মেলে না।
মূলত ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের জন্য হোলসেল বা পাইকারি মূল্যে পোশাক কেনাকাটা করতে এই মার্কেটে ভিড় জমান। বাজারের দোকান মালিকরা সরাসরি গার্মেন্টস থেকে লটে পোশাক কিনে এনে এখানে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেন। মার্কেটের প্রায় সব দোকানেই এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পোশাক বিক্রি করা হয় এবং বেশিরভাগই হোলসেলে বা পাইকারিতে বিক্রি করা হয়। তবে, সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদার কারণে অনেক দোকানি খুচরাও বিক্রি করে থাকেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই মার্কেটে ব্যবসা করছেন দোকান মালিক আল-আমিন। তাঁর কথায় উঠে আসে বর্তমান বাজারের কঠিন চিত্র।
আল-আমিন জানান, এখানে একটি দোকানে নতুন করে নামতে হলে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হয় এবং মাসিক দোকান ভাড়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা গুনতে হয়।
"ব্যবসা আগে ভালো ছিল, কিন্তু বিগত দুই বছর যাবত ব্যবসা অনেকটাই কমে গেছে, হতাশার সুরে বললেন আল-আমিন। "এখনকার ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলে কেমন আছেন, সবাই বলে ভালো, কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার ব্যবসার কী অবস্থা, তখন উত্তরে বলে, ভালো না।"
এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে। তাঁর মতে, "যে বেশি ভালো পণ্য দিতে পারবে, তারই পণ্য খদ্দেররা বেশি কিনবে।" নতুন উদ্যোক্তাদের তাই এই ব্যবসায় নামার আগে ব্যাপক বুঝে শুনে নামার পরামর্শ দিলেন তিনি।