ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

১৩ কার্তিক ১৪৩২, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

যানজট মুক্ত মেট্রোরেলে এখন পকেটমারের উপদ্রব!

মো: নাঈমুল হোসেন তালুকদার

প্রকাশ: ১২:২৭, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

যানজট মুক্ত মেট্রোরেলে এখন পকেটমারের উপদ্রব!

রুপক ছবি। সংগৃহীত।

যানজট কবলিত এই নগরীতে যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ঢাকা মেট্রোরেল। লক্ষ লক্ষ  মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের প্রধান ভরসা এই ট্রানজিট ব্যবস্থা। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং তীব্র যানজট থেকে মুক্তি পাওয়ায় চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীদের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে, এই স্বস্তির বাহনে সম্প্রতি পকেটমারের উপদ্রব শুরু হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকেই এটি দ্রুততম সময়ে ঢাকা শহরের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ রুটে মাত্র আধা ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছানো সম্ভব, যা আগে মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে তীব্র যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত।

অফিস আদালত, স্কুল-কলেজে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মেট্রোরেল এখন এক অপরিহার্য মাধ্যম। কিন্তু এই স্বাচ্ছন্দ্যময় যাত্রাপথে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে অফিসের শুরু এবং শেষের সময় মেট্রোরেলে যখন উপচে পড়া ভিড় থাকে তখন এই সুযোগকে কাজে লাগায় অসাধু পকেটমার চক্র।

একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, ভিড়ের সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ পকেটমাররা মেট্রোরেলে উঠে পড়ে এবং যাত্রীদের অজান্তেই তাদের মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। অনেক সময় ভিড়ের কারণে যাত্রীরা টেরও পান না কখন তাদের পকেট বা ব্যাগ কাটা পড়ছে।

"যানজট থেকে বাঁচতে মেট্রোরেলই এখন একমাত্র ভরসা," বলছিলেন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী, "কিন্তু ভিড়ের মধ্যে সবসময় একটা পকেটমারের ভয় কাজ করে। মাঝেমধ্যে এমন ঘটনা শুনছি যা খুবই উদ্বেগজনক।

এমনই আরেকজন যাত্রী প্রতিনিয়ত মেট্রোরেল করে সচিবালায় যাতায়াত করেন। প্রতিদিনের রুটিন মত তিনি সম্প্রতি চাকরির উদ্দেশ্যে সকালে বের হন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একদিন যখন অফিস থেকে ফেরার পথে ১০ নম্বরে স্টেশনের নামবার সময় দেখেন তার পকেটের মধ্যে মোবাইল সেটটি নেই।

স্টেশনে এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান যে, এখানে আগের থেকে আরো কঠোরভাবে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল পুলিশ। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে সন্দেজনক ব্যক্তির ওপর বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। কিন্তু পকেট কাটা যাচ্ছে মেট্রোরেলের ভিতর যখন ট্রেনের ভিতরের ক্যামেরা পকেট পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। ঐ পুলিশ বললেন, যদি যাত্রীরা যখন কোর পকেটমারকে ধরে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে,তখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থিাকি। যে স্টেশনে বসে ধরা হয় সেই স্টেশন যেই থানার অধীনে থাকে সেই থানায় পকেটমারকে হস্তান্তর করা হয়। সামনের দিনে আরো নিরাপত্তা বাড়বে বলে আশাবাদী এই পুলিশ কন্সটেবল।

মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে কঠোর হলেও পকেটমাররা এতটাই দ্রুততার সাথে কাজ করে যে তাদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। যাত্রীদের দাবি, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বিশেষত ভিড়ের সময়গুলিতে সাদা পোশাকে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানোর সুবিধা এবং যানজটমুক্ত যাত্রার জন্য মেট্রোরেল যেমন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তেমনি এই বাহনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। পকেটমারদের দৌরাত্ম্য রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, এটি সাধারণ যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রাকে আতঙ্কের যাত্রায় পরিণত করতে পারে।

 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন