নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২:৩৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাকুরিচ্যুত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত।
একাধিক আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস এবং আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মেলায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। উপ-সচিব আফছানা বিলকিস স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, সরকারি চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ-৭ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রথমে তিনি ভিডিওগুলো ভুয়া বলে দাবি করলেও ফরেনসিক পরীক্ষায় এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে শাহীনুলকে পিছনের দরজা দিয়ে অফিস ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং পরে তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
অতিরিক্ত সচিব সাঈদ কুতুবের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা অবৈধভাবে উত্তোলনের অনুমতি দেন তিনি। এছাড়া, শাহীনুল এবং তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবেও অস্বাভাবিক নগদ জমার প্রমাণ মিলেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৪ থেকে ১২ মে’র মধ্যে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি শাহীনুলের ব্যক্তিগত হিসাবে ২৩ লাখ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর হিসাবে ২০ লাখ টাকা নগদে জমা দেন।
শাহীনুল ইসলামের নিয়োগ শুরু থেকেই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে এম এহসান ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান এবং প্রভাবশালী কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। তাঁর সময়ে প্রায় ১,৫০০ ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী গ্রুপের রাজনৈতিক চাপে তাঁকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সার্চ কমিটির সুপারিশের বাইরে গিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শাহীনুল ইসলামকে বিএফআইইউ প্রধান করা হয়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে বিরক্তির জন্ম দেয়।
ভিডিও কেলেঙ্কারি, অনিয়ম এবং অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভের পরও সরকার শুরুতে পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর চাকরিচ্যুতি নিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ আর্থিক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।