ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৪৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৫৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চায়। ছবি সংগৃহীত।
শুক্রবার, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে বিপুল ভোটে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এই প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
১৯৩ সদস্যের এই সংস্থাটি "নিউইয়র্ক ঘোষণা"-কে সমর্থন করে একটি অ-বাধ্যতামূলক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এই ঘোষণায় কয়েক দশকের পুরোনো এই সংঘাত নিরসনের জন্য একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ১৪২টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে ১০টি এবং ১২টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল, রিপোর্ট ইউএনবি’র।
ভোটের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরে নতুন ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ঘোষণা করেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনই প্রতিষ্ঠিত হবে না। ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করে। নেতানিয়াহু বলেন, "এই জায়গা আমাদেরই।"
প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ফ্রান্স এবং সৌদি আরব, যারা জুলাই মাসে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে উৎসাহিত করার জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেখানেই প্রথম এই ঘোষণাটি অনুমোদিত হয়েছিল।
চলমান গাজা যুদ্ধ এবং বৃহত্তর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল আশা করছে যে আরও অন্তত ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, যা এর আগে স্বীকৃতি দেওয়া ১৪৫টিরও বেশি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর এই ভোটকে শান্তির জন্য বৈশ্বিক সমর্থনের একটি লক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সরাসরি ইসরায়েলের নাম না নিয়ে তিনি "যারা এখনও যুদ্ধ এবং ধ্বংসের জন্য চাপ দিচ্ছে" তাদের সমালোচনা করেন এবং যুক্তি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এটিকে "একটি নাটক" বলে অভিহিত করেছেন, যা হামাসকে সুবিধা দেবে এবং সাধারণ পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এবং নিউইয়র্ক ঘোষণার বিস্তারিত
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ও এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মরগান ওর্তাগাস এই প্রস্তাবকে "ভ্রান্ত" এবং "অসময়ে গ্রহণ করা" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এটিকে হামাসের জন্য একটি প্রচারণার উপহার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা সত্যিকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।
নিউইয়র্ক ঘোষণার মূল বিষয়বস্তু
'নিউইয়র্ক ঘোষণা'টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে আরব রাষ্ট্রগুলো প্রকাশ্যে হামাসের নিন্দা করেছে। এতে হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর দক্ষিণ ইসরায়েলে চালানো হামলার নিন্দা করা হয়েছে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল, যার মধ্যে এখনও প্রায় ২০ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ঘোষণায় গাজায় ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডেরও নিন্দা করা হয়েছে। এতে বিমান হামলা, অবরোধ এবং খাদ্য ও সরবরাহের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট মারাত্মক মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ৬৫,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যদিও এই সংখ্যায় বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের আলাদা করা হয়নি।
নথিতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে একটি অন্তর্বর্তী কমিটির মাধ্যমে গাজাসহ সমস্ত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এতে হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে এবং নিরস্ত্রীকরণ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও, ঘোষণায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় সহায়তা, যুদ্ধবিরতি তদারকি, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা সহায়তা এবং ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অস্থায়ী জাতিসংঘ-সমর্থিত আন্তর্জাতিক মিশনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।
সবশেষে, ঘোষণায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এটিকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসরায়েলের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে এতে সতর্ক করা হয়েছে যে "অবৈধ একতরফা পদক্ষেপ" একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।