ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯:১৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: ইউরো নিউজ।
৩২৫ জন সাবেক ইইউ রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ৩২৫ জন সাবেক ইইউ রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি দল এক চিঠিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যকলাপ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের নীতির কারণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA)-কে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে, খবর ইউরো নিউজের।
চিঠিতে, যা ইউরো নিউজ দেখেছে, তাতে সাবেক ইইউ রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তারা সাধারণ পরিষদ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC)-কে "ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি সরকার কর্তৃক প্রতিদিন আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের" অনুরোধ জানিযেছেন।
জাতিসংঘ বহু বছর ধরে পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপের নিন্দা করে একাধিক ‘আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়’ এমন প্রস্তাব পাস করেছে।
কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা অনুমোদিত হয়নি। কারণ এর পাঁচ স্থায়ী সদস্য—চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র—প্রত্যেকেরই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে।
জুলাই মাসে, যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর কারণ ছিল, তিনি জুনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন যেখানে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কার্যকলাপে সহায়তা করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
চিঠিতে, সাবেক ইইউ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে "ফিলিস্তিন এবং জাতিসংঘের সরকারি প্রতিনিধিদের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সংলাপে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার জন্য নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করার" অনুরোধও জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি
চিঠিতে বলা হয়েছে, "আমরা ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ করছি যারা এখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেননি, তারা যেন জাতিসংঘের ১৪৭ সদস্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি আসন্ন সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যারা প্যালেষ্টাইনকে সমর্থন করার ঘোষণা দিয়েছেন — বিশেষ করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, মাল্টা, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া — তাদের সাথে যোগ দেন।"
স্বাক্ষরকারীরা আরও বলেন, "৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ হামাস এবং অন্যদের দ্বারা ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর জঘন্য আক্রমণ এবং জিম্মিদের ক্রমাগত আটক রাখা কখনোই গাজায় চালানো প্রতিশোধকে ন্যায্যতা দিতে পারে না, যা এখন আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বজনীন মানবাধিকারের কবরস্থান হয়ে উঠছে।"
হামাস-পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে ৬৪,০০০-এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এই সংখ্যায় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে আগস্টের শেষ থেকে গাজা দুর্ভিক্ষ কবলিত অবস্থায় রয়েছে, এবং ৫ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহর দখলের জন্য একটি ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে।
ইসরায়েল সবসময়ই জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করে আসছে। ইসরায়েলের মতে, জাতিসংঘ তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করে, অন্যান্য সংঘাতের তুলনায় তাদের কার্যকলাপের ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেয় এবং গাজায় তাদের সামরিক অভিযানকে নিন্দা করলেও হামাসের যথেষ্ট নিন্দা করে না।
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার সর্বদা নিষেধাজ্ঞা বা অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আহ্বান জানানো জাতিসংঘের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, কেননা তিনি মনে করেন এগুলো পক্ষপাতদুষ্ট এবং ফলপ্রসূ নয় ।