ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭:৫৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি।
প্রকৃতিতে শরতের শুভ্রতার সঙ্গে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। শিশির ভেজা ভোর আর শরতের কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বাকি মাত্র পাঁচ দিন। এ দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রতিমা তৈরির ধুম।
মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলো হয়ে উঠছে অপরূপ। খড় আর কাদা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি শেষে এখন চলছে প্রলেপ ও রঙের কাজ। একই সঙ্গে শরতের দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে দিনরাত মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি, রিপোর্ট বাসসের।
পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা হচ্ছে দেবীদুর্গার প্রতিমা। কারিগররা প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দেবীদুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা।
বাঙালি হিন্দুর উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয় ষষ্ঠীর আগে থেকেই। এবারের দুর্গাপূজা ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু করে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। এর আগে পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ। তবে ষষ্ঠী থেকেই কার্যত উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয়।
ইতোমধ্যে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) শুভ মহালয়ার মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। এইদিন ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো এবং দেবীর চক্ষু দান করা হয়। মহালয়া উপলক্ষে চন্ডীপাঠ ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপে ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপিত হয় পুরান ঢাকায়। এবার ঢাকাশ্বেরী জাতীয় মন্দির, আজিমপুর সরকারি কলোনী, ঋষি পাড়া দূর্গা মন্দির, শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, বাংলাবাজার গোয়ারনগর, জমিদারবাড়ী, গেন্ডারিয়া এলাকার অলিগলিতে পূজার আয়োজন করা হবে। ছোট-বড় বিভিন্ন মন্ডপে শুরু হয়েছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ।
এছাড়াও স্বামীবাগে লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামন্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের পূজামন্ডপসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও মন্ডপেও পূজার আয়োজন চলছে পুরোদমে।
মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। শুধু জীবিকার জন্যই নয়। দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা। দুর্গা মাকে মায়ের মতোই তৈরি করা হচ্ছে।
শাস্ত্রীয় মতে, ২০২৫ সালে মা দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আসছেন এবং দোলায় চড়ে কৈলাসে গমন করবেন। দেবীর আগমন হাতির পিঠে হলে তা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, যা বসুন্ধরাকে শস্য-শ্যামলা ও সমৃদ্ধ করে তোলে। তবে গমন দোলায় হলে তা মহামারী বা মড়কের মতো অশুভ ইঙ্গিত বহন করে, যা এই বছর শুভ আগমন সত্ত্বেও প্রকৃতির উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বাসসকে বলেন, সারাদেশে এই বছর দুর্গাপূজা মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মন্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫৮টি মন্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর ঢাকা মহানগর এলাকায় গত বছর ২৫২টি মন্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়েছিল।
এদিকে এ বছর অন্তর্র্বতী সরকার দুর্গাপূজার জন্য সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশের জন্য ৪ কোটি টাকা এবং পার্বত্য জেলার গুলোর জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবন্দ্র নাথ উরাঁও বাসসকে জানিয়েছেন।
আজ সোমবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গাপূজার জন্য প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। পর্দা দিয়ে ঢেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকেশ্বরী দুর্গাপূজা মন্ডপের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী বাসসকে বলেন, দেশ ও জাতির শুভ কামনায় মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
এদিকে, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশের ৩২,৯৯০টি পূজা মন্ডপে মোট ১৬,৪৯৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি পূজা মন্ডপে ৫শ’ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ কর্মসূচি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব গাজী গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে এই তথ্য জানা যায়।
দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে বরাদ্দ পৌঁছে দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলার ৩২,৯৯০টি পূজা মন্ডপের অনুকূলে ভক্তদের আহার্য বিতরণের জন্য মন্ডপ প্রতি ৫শ’ কেজি করে মোট ১৬,৪৯৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দে ছকে বর্ণিত বিভাজন ও শর্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে বরাদ্দ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে ছাড় দেওয়া হল।