ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সঞ্চয়পত্রের জন্য লেনদেনযোগ্য বাজার তৈরির প্রস্তাব, গভর্ণরের

টোল থেকে আয় সিকিউরিটাইজ করে নতুন প্রকল্প নেয়া যায়

প্রকাশ: ১৮:০৩, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সঞ্চয়পত্রের জন্য লেনদেনযোগ্য বাজার তৈরির প্রস্তাব, গভর্ণরের

বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইল ছবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সোমবার সঞ্চয়পত্রগুলোকে সম্পূর্ণরূপে লেনদেনযোগ্য করার জন্য একটি পৃথক সেকেন্ডারি বাজার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের উপকৃত করবে, তারল্য বাড়াবে এবং দেশের আর্থিক বাজারকে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, "বর্তমানে সঞ্চয়পত্রগুলো বাজারের সঙ্গে আংশিকভাবে যুক্ত। আমাদের এগুলোকে সম্পূর্ণরূপে লেনদেনযোগ্য করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এটি করা সম্ভব," রিপোর্ট ইউএনবি’র।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি-র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত 'আনলকিং বাংলাদেশ'স বন্ড অ্যান্ড সুকুক মার্কেটস: ফিসকাল স্পেস, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেলিভারি অ্যান্ড ইসলামিক মানি মার্কেট ডেভেলপমেন্ট' শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন।

গভর্নর সরকারি সিকিউরিটিজের পাশাপাশি বেসরকারি বন্ডের জন্যও একটি পৃথক বাজারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "সাধারণ নাগরিকরা ইতিমধ্যেই সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এখন বেসরকারি বন্ডগুলোকেও সঠিক কাঠামোর অধীনে লেনদেনযোগ্য করতে হবে। শুধু এটিই রাতারাতি বন্ড বাজারকে দ্বিগুণ করতে এবং এটিকে প্রাণবন্ত করতে পারে।"

দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের সুযোগ তুলে ধরে মনসুর বলেন, পেনশন স্কিম, প্রভিডেন্ট ফান্ড, কর্পোরেট পেনশন ফান্ড এবং বেনিভোলেন্ট ফান্ডগুলো বন্ডে বিনিয়োগের প্রধান উৎস হতে পারে। তিনি আরও বলেন, "এর জন্য একটি পেনশন রেগুলেটরি অথরিটি থাকা অপরিহার্য, যা নিশ্চিত করবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে তাদের তহবিল তৈরি করছে।"

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো উল্টো পথে চলছে। "বিশ্বব্যাপী, বন্ড বাজার সবচেয়ে প্রভাবশালী, যেখানে মোট বন্ডের পরিমাণ প্রায় ১৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার—যা বৈশ্বিক জিডিপির ১৩০%।"

তিনি আরও বলেন, স্টক মার্কেটের আকার ৯০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর মুদ্রাবাজার প্রায় ৬০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাংক-নির্ভর। আমাদের বীমা খাত জিডিপির মাত্র ০.৪%—যা হিসাবের জন্য খুবই সামান্য।"

তিনি পর্যবেক্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলো বন্ড ইস্যু করার পরিবর্তে ব্যাংকের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। "হতে পারে এর পেছনে কিছু সুবিধা আছে—যেমন ঋণ পরিশোধ এড়ানো বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর সুযোগ। তবে আমাদের এই ব্যাংক-নির্ভর কর্পোরেট সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে," মনসুর বলেন।

ইসলামিক অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, সুকুক বাজার এখনও খুবই ছোট, যেখানে এ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি সুকুক ইস্যু করা হয়েছে, যার মূল্য ২৪,০০০ কোটি টাকা। "অথচ আমাদের অনেক অবকাঠামো প্রকল্প থেকে রাজস্ব আয় হয়, যা সিকিউরিটাইজ করা যেতে পারে। পদ্মা বা যমুনা সেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার বা হাইওয়ে থেকে আসা টোল প্রবাহ সিকিউরিটাইজ করে নতুন প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব। এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ ইউনিট থাকা দরকার, যা এই ধরনের উদ্ভাবনের জন্য কাজ করবে," তিনি পরামর্শ দেন।

মনসুর বীমা খাতের সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বীমা কভারেজ জিডিপির মাত্র ০.৪%। এর তুলনায় ভারতে এটি ৪% এবং উন্নত অর্থনীতিতে ১২%।

গভর্নর পরিশেষে জানান যে, বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড বাজারের সংস্কারের জন্য একটি গবেষণামূলক নীতিমালা তৈরি করেছে, যেখানে প্রচলিত এবং সুকুক উভয় ধরনের উপকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে। এই নীতিমালা শিগগিরই সরকারের কাছে পেশ করা হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন