নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
আজ সকালেও ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ছবি: মো: নাঈম হোসেন তালুকদার।
মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ দিন পরও সেখান থেকে ধোঁয়া ও গ্যাস নির্গত হচ্ছে। আজ সকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাশের ভবন থেকে হোস পাইপ ও রোবোটিক মেশিনের মাধ্যমে পানি ছিটিয়েছে । এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জনকে শনাক্ত করা গেলেও বাকি ৬ জনের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হবে।
বাতাসে রাসায়নিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩০০ ফুট দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আলম কেমিক্যালসের এই গুদামে বিপুল পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার মজুত থাকার কারণে আবদ্ধ পরিবেশে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।
১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু
১৬ জন ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে সামনে এসেছে কারখানার নানা অব্যবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, আগুন লাগার সময় শ্রমিকদের বের হওয়ার প্রধান গেট ও ছাদে তালা দেয়া ছিল। ফলে তারা বাইরে বের হতে পারেননি। এছাড়া এই পোশাক কারাখানা—আর কে ফ্যাশান লিমিটেড—এর কোনো জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা ছিল না। শুধু এই কারখানাই নয়, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই এমন অনেক কারখানা অত্র অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় আলম কেমিক্যালসের মালিক শাহ আলম এবং আরও কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। জানা গেছে, কেমিক্যাল গুদামটিতে প্রায় সাত কোটি টাকার রাসায়নিক পদার্থ ও ব্লিচিং পাউডার মজুত ছিল। তবে, মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রশাসন ও মালিকপক্ষের এই উদাসীনতায় হাজারো শ্রমিকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। বহু কারখানায় সরকারি অনুমোদন ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। ফায়ার সার্ভিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাতে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা প্রতিটি পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা এসে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং আসামিদের যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।