ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮:২৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিল্পীর চোখে গামা রশ্মির বিকিরন। ছবি: সংগৃহীত।
এই বিস্ফোরণটি একটি অত্যন্ত অসাধারণ ঘটনার কারণে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানেন না সেটি কী।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, বিজ্ঞানীরা একাধিক টেলিস্কোপের সাহায্যে এমন একটি গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ (GRB) শনাক্ত করেছেন যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তারা একটি গামা-রশ্মির বিস্ফোরণ দেখতে পান যা একদিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদেরকে অবাক করে দিয়েছে, রিপোর্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন আর এটি লিখেছেন সারাহ হাশমি।
গামা-রশ্মির বিস্ফোরণ এবং এর কারণ
গামা-রশ্মির বিস্ফোরণ হলো অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরণ যা সাধারণত কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ধারণা করা হয়, দীর্ঘ বিস্ফোরণগুলো ঘটে যখন বিশাল তারাদের জীবনাবসান হয়, আর সংক্ষিপ্ত বিস্ফোরণগুলো ঘটে যখন দুটি নিউট্রন তারা বা একটি নিউট্রন তারা এবং একটি ব্ল্যাক হোল একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করে। এই বিস্ফোরণগুলো ব্ল্যাক হোল তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তীতে আলোর প্রায় কাছাকাছি গতিতে কণা নির্গত করে।
তবে, এই নতুন বর্ণিত GRB টি অত্যন্ত অস্বাভাবিক, কারণ এটি "বেশিরভাগ বার্স্ট -এর চেয়ে ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি সময় ধরে গামা রে উদগীরণ করেছে," এক বিবৃতিতে বলেছেন গবেষণার প্রধান লেখক এবং নেদারল্যান্ডসের রাডবাউড ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু লেভান।
মজার তথ্য: একটি গামা-রশ্মির বিস্ফোরণের ক্ষমতা
গামা-রশ্মির বিস্ফোরণ হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘটনা। একটি মাত্র, স্বল্পস্থায়ী বিস্ফোরণ আমাদের সূর্যের চেয়ে এক কুইন্টিলিয়ন—১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০—গুণ বেশি উজ্জ্বল হতে পারে।
GRB 250702B নামের এই বিস্ফোরণটি টি প্রথমে জুলাই মাসে নাসার ফার্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা শনাক্ত করা হয়েছিল। ফার্মি কয়েক ঘন্টার মধ্যে তিনটি বিস্ফোরণ শনাক্ত করে, যা তাৎক্ষণিকভাবে অস্বাভাবিক ছিল। ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গবেষণার সহ-লেখক আন্তোনিও মার্টিন-কারিল্লো বলেন, "গামা-রশ্মির বিস্ফোরণ কখনো পুনরাবৃত্তি হয় না, কারণ যে ঘটনা তাদের তৈরি করে তা ধ্বংসাত্মক।" মূলত, যে বস্তু বিস্ফোরণ ঘটায়, সেটি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়, তাই একই ধরনের বিস্ফোরণ আবার ঘটবে বলে আশা করা যায় না।
পরে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে অন্যান্য টেলিস্কোপও কয়েক ঘন্টা আগে এই GRB-টি শনাক্ত করেছিল। এই যন্ত্রগুলো বিস্ফোরণের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি, তাই বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় বিস্ফোরণ সম্পর্কে আরও জানতে অন্য যন্ত্র ব্যবহার করেন। পরের দিন, তারা ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি’র ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (VLT) ব্যবহার করে বিস্ফোরণের উৎস খুঁজে বের করেন। ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ এর HAWK-I ইনফ্রারেড ক্যামেরার সাহায্যে গবেষকরা নিশ্চিত হন যে গামা রশ্মিগুলো আমাদের ছায়াপথের বাইরে থেকে এসেছে—এই আবিষ্কারটি পরে নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা যাচাই করা হয়েছিল। এই আবিষ্কারটি গত মাসে 'দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
লেভান বিবৃতিতে আরও বলেন, "এই পর্যবেক্ষণগুলোর আগে, কমিউনিটিতে সাধারণ ধারণা ছিল যে এই GRB-টি অবশ্যই আমাদের ছায়াপথের ভেতর থেকে এসেছে। ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ সেই ধারণাটি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।" এবং এই বার্স্ট টি আন্তঃছায়াপথীয় হওয়ার কারণে এটি বিজ্ঞানীদের প্রাথমিকভাবে যা ভেবেছিলেন তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী ছিল।
গবেষকরা এখনো এই গামা-রশ্মির বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন। একটি সম্ভাবনা হলো একটি বিশাল তারার পতন এবং এর থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তির নির্গমন। কিন্তু যদি তাই হতো, তাহলে এই বিস্ফোরণটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হওয়াই বেশি স্বাভাবিক ছিল। লেভান বলেন, "যদি এটি একটি বিশাল তারা হয়, তবে এটি এমন একটি পতন যা আমরা আগে কখনো দেখিনি।"
আরেকটি সম্ভাবনা হলো একটি ব্ল্যাক হোল কোনো তারাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, কিন্তু এটিও আরও অনেক প্রশ্ন তৈরি করে। এই বিস্ফোরণের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য তারা এবং ব্ল্যাক হোল উভয়কেই অত্যন্ত অস্বাভাবিক হতে হবে।
মার্টিন-কারিল্লো বলেন, "আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে এটি কী থেকে উৎপন্ন হয়েছে, কিন্তু এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা এই অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং উত্তেজনাপূর্ণ বস্তুটিকে বোঝার দিকে একটি বিশাল পদক্ষেপ নিয়েছি।"
আপাতত, গবেষকরা GRB 250702B এর পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে এটি তাদের আরও কী কী অবাক করতে পারে তা দেখতে পারেন। যদি তারা বিস্ফোরণটির দূরত্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন, তবে এর শক্তি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তারা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপসহ অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে এর উৎস পর্যবেক্ষণ করছেন, এই আশায় যে এই অদ্ভুত বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে নতুন কোনো সূত্র খুঁজে পাবেন।