শিরোনাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৫১, ৮ নভেম্বর ২০২৫
প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।
টেকসই, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ জেলা কক্সবাজারের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সহনশীলতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে “PRO-ACT Bangladesh – কক্সবাজারে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের মাধ্যমে সহনশীলতা জোরদারকরণ”। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (DAE) দ্বারা বাস্তবায়িত হবে এবং ২০২৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত চলবে, রিপোর্ট ইউএনবি’র।
সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদানে পরিচালিত এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৫৩.০১ কোটি টাকা। এটি কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া এবং টেকনাফ — এই চারটি উপজেলায় খাদ্য ও আয়ের নিরাপত্তা উন্নত করা, টেকসই কৃষির প্রচার করা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
প্রকল্পের মূল উদ্যোগসমূহ:
কৃষি ও মৎস্য চাষে সহায়তা: এই উদ্যোগের অধীনে, ১০,০০০ কৃষক পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল চাষের জন্য প্রশিক্ষণ এবং উপকরণ সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি, ৬০০টি পরিবার যারা মাছ চাষের সাথে জড়িত, তাদের আধুনিক মাছ চাষের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ: এছাড়া, ১,০৫০ জন কৃষককে ব্র্যান্ডিং এবং বাজার অ্যাক্সেস উন্নয়নের মাধ্যমে বিষমুক্ত শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করা হবে।
বাজার সংযোগ ও প্রযুক্তি: বাজার সংযোগ বাড়াতে এবং আইসিটি-ভিত্তিক কৃষি সম্প্রসারণ পরিষেবা প্রচার করতে পাঁচটি কৃষি একত্রীকরণ কেন্দ্র (agricultural aggregation centres) তৈরি করার পরিকল্পনাও এই প্রকল্পের রয়েছে।
আর্থিক সাক্ষরতা: স্থানীয় পরিষেবা প্রদানকারী এবং কৃষক গোষ্ঠীগুলিকে কৃষি ঋণের সহজলভ্যতা উন্নত করতে এবং ভ্যালু চেইন শক্তিশালী করতে আর্থিক সাক্ষরতা, ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
দুর্যোগ প্রস্তুতি: দুর্যোগের প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য, সম্প্রদায়গুলিকে ভূমিধস আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা (Landslide Early Warning System - LEWS) সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং কৃষি পরিকল্পনায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ফসল-ভিত্তিক ভূমি ব্যবহার মানচিত্র তৈরি করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতে, এই প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রশমন করতে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশগত অবনতি — যার মধ্যে বনায়ন ধ্বংস, ভূমি ক্ষয় এবং জলাবদ্ধতা রয়েছে — মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কক্সবাজারের জলবায়ু সহনশীলতা প্রকল্পে অর্থায়ন ও উদ্দেশ্য
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) এর অর্থায়নে এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা , বন বিভাগ, এবং মৎস্য অধিদপ্তরের (Department of Fisheries) সহযোগিতায় PRO-ACT Bangladesh প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অভিযোজন ক্ষমতা (adaptive capacities) জোরদার করা।
ছোট্ট জমির কৃষক, নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীসহ ৫৪,০০০ এরও বেশি সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে, এই উদ্যোগটি জলবায়ু-সহনশীল কৃষি (climate-smart agriculture), টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সুযোগের মাধ্যমে কক্সবাজারের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের লক্ষ্য স্থির করেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অভিযোজন লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধির মুখে একটি স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যৎ নির্মাণে সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেয়।
কক্সবাজারের দুর্বলতা ও রোহিঙ্গা প্রভাব
কক্সবাজার জেলাটি ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত, ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক বিপদ ও চরম আবহাওয়ার বিস্তৃত পরিসরের ঘন ঘন সম্মুখীন হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জেলাটি বিশেষ করে বারবার ভূমিধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) মতে, জেলার জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এই ব্যাপক দারিদ্র্য এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সীমিত মোকাবিলা করার ক্ষমতা দুর্যোগের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজার প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এই শরণার্থীর আগমন নতুন পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বনায়ন ধ্বংস, পাহাড় কাটা এবং অবকাঠামোর ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ। অতিরিক্ত ভিড়যুক্ত বসতি, পাহাড়ি এলাকা এবং অস্থায়ী আবাসনের কারণে রোহিঙ্গা পরিবারগুলিও চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।