ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:২৬, ৪ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:২৯, ৪ আগস্ট ২০২৫
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল ভোক্তা
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল ক্রয় করলে মার্কিন জরিমানার ঝুঁকি ভারতের আমদানি বিলের সাথে অতিরিক্ত ৯ থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারে।
কেপ্লারের তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে—জুলাই মাসে প্রতিদিন ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে জুনে যা ২.১ মিলিয়ন ব্যারেলে দাঁড়ায়—যেটিকে শোধনাগার রক্ষণাবেক্ষণ এবং বর্ষাকালে স্বল্প চাহিদার ফলাফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় রপ্তানিতে অতিরিক্ত শুল্ক বা জরিমানার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় যদি নয়া দিল্লী রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় তবে ভারতের বার্ষিক তেল আমদানি বিল ৯-১১ বিলিয়ন ডলার বেড়ে যেতে পারে, ভারতীয় একাধিক মিডিয়া এই খবর দিয়েছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল ভোক্তা এবং আমদানিকারক ভারত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর মস্কোর উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগে বাজার-মূল্যের অনেক কম দামে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ব্যাপক হারে আমদানি করা শুরু করে।
তারা ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের ব্যবহার দ্রুক গতিতে বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী ০.২% এর কম আমদানি থেকে বর্তমানে ৩৫-৪০% এ পৌঁছেছে। এর ফলে ভারতের ক্রয় বিল বেশ কম হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানি করে তারা রেকর্ড মুনাফা লুফে নিয়েছে। তারা সেসব দেশেও পেট্রলিয়াম পণ্য রপ্তানি করেছে যারা সরাসরি রাশিয়া থেকে সরাসরি আমদানি নিষেধাজ্ঞায় ছিল।
তবে, সেই মডেলটি এখন দুটি চাপের সম্মুখীন হয়েছে। প্রথমটি হল মার্কিন শাস্তির হুমকি, এবং দ্বিতীয়টি হল ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল থেকে উৎপাদিত পরিশোধিত পণ্যের উপর ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞা। "এটি উভয় পক্ষের চাপ," কেপলারের প্রধান গবেষণা ও বিশ্লেষক (রিফাইনিং এবং মডেলিং) সুমিত রিটোলিয়া ভারতীয ইংরেজি এক পত্রিকাকে বলেন। "একসাথে, এই পদক্ষেপ ভারতের অপরিশোধিত তেল সংগ্রহের বিকল্পকে গভীরভাবে ব্যাহত করছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে খরচের অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।”
কেপলার হলো জ্বালানি ও জাহাজ চলাচলের বাজারের জন্য তথ্য ও বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞ একটি কোম্পানি। এটি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জটিল সরবরাহ চেইনের ভেতরের খবর দিয়ে থাকে। কেপলার নামটি জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলারের সাথেও যুক্ত, যিনি আমাদের গ্রহের গতি সূত্রের জন্য পরিচিত।
ভারত গত অর্থ বছরে (২০২৪) অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার তেলের বিকল্প হিসেবে রাশিয়ান তেল ব্যবহার করলে বিলটি তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। "প্রতি ব্যারেল ৫ ডলার ছাড়ে ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল হারানোর কথা হিসেবে ধরলে ভারতের আমদানি বিল বার্ষিক ৯-১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে," রিটোলিয়া বলেন।
সরবরাহ কঠোর করার কারণে যদি বিশ্বব্যাপী দাম আরও বাড়ে, তাহলে খরচের প্রভাব আরও বেশি হতে পারে।
বেসরকারি পরিশোধকরা ইতিমধ্যেই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল গ্রহণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন। জুলাই মাসে, রাশিয়ান তেল আমদানি কমে গিয়ে ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল (দৈনিক) হয়েছে, যা জুনে ২.১ মিলিয়ন ব্যারেল ছিল। কেপলারের মতে রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধকরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং রাশিয়ান তেল থেকে সরে আসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।