ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:১২, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
প্রতীকি ছবি। বাসস।
আজ আপনি কেমন বোধ করছেন তার ওপর নির্ভর করে আগামীকাল আপনি আরও ভালো অনুভব করবেন কিনা। বসে না থেকে যদি কিছু হাল্কা ব্যায়াম বা ৩০ মিনিটের জন্য আজ হাঁটতে পারেন, তাহলে আগামীকাল আপনি ভাল বোধ করবেন।
আজ বসে থাকা কমিয়ে হালকা চলাফেরা করলে তা আপনার আগামীকালের মেজাজকে ভালো করে দিতে পারে।
টেলর সুইফটের নতুন গান 'Opalite' (ওপালাইট) পুরোপুরি রূপান্তর বা Transformation নিয়ে লেখা। তিনি এখানে অন্ধকার ("onyx nights") থেকে উজ্জ্বলতার ("make your own sunshine") দিকে যাওয়ার কথা গেয়েছেন। এই মানব-নির্মিত দ্যুতিময় রত্নটির নামানুসারে তৈরি গানটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সুখ খুঁজে পাওয়ার বিষয় নয়, বরং এটি সৃষ্টি করতে হয়, ফিচার রিপোর্ট করেছে সাইকোলজি ডট কম।
সুইফটের কথায় বোঝা যায় যে মানসিকতা (mindset) আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। মানসিকতার সামান্য পরিবর্তন আর 'সুইফটি অ্যাফারমেশন'-এর (Swiftie affirmations) মাধ্যমে, আপনার জীবনে আসা ধাক্কাগুলো হয়ে যায় "just a temporary speed bump" (শুধুমাত্র একটি সাময়িক বাধা), "failure gives you freedom" (ব্যর্থতা আপনাকে স্বাধীনতা এনে দেয়), আর জীবন যখন কঠিন হয়ে ওঠে, তখন ভাবতে হবে "don't sweat it, baby" (আরে বাবা, চিন্তা করো না)।
বিশেষত একটি সাদাসিধা লিরিক: "you're starving 'til you're not" (আপনি ক্ষুধার্ত, যতক্ষণ না আপনি তা নন), আমাকে 'Psychology of Sport and and Exercise' জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণার (Le et al., 2025) কথা মনে করিয়ে দেয়। গবেষকরা দেখেছেন যে মানুষের পরের দিনের সুখের প্রধান পার্থক্য নির্ভর করে আজ তারা কতটা সময় বসে কাটিয়েছে তার ওপর। অথবা, 'Opalite'-এর অনুপ্রেরণায় বললে: "You're either sitting or you’re not" (আপনি হয় বসে আছেন, নাহয় বসে নেই)।
৫টি পারস্পরিকভাবে বিশেষ দৈনিক আচরণ
গবেষণাটিতে দেখা হয়েছে যে মানুষ প্রতিদিন তাদের সময়কে এই পাঁচটি পারস্পরিকভাবে বিশেষ দৈনন্দিন আচরণের মধ্যে কীভাবে ভাগ করে এবং এই আচরণগুলিতে ব্যয় করা সময় কীভাবে পরের দিনের মেজাজকে প্রভাবিত করে:
১. ঘুমানো (Sleeping): ঘুমন্ত থাকা। ২. বিছানায় জেগে থাকা (Awake in bed): স্ক্রলিং করা, পড়া বা চিন্তা করা (rumination)। ৩. বসে থাকা (Sitting) (Sedentary behavior): স্থির হয়ে বসে থাকা। ৪. হালকা কার্যকলাপ (Light activity): সাধারণ হাঁটা, দাঁড়িয়ে থাকা, গৃহস্থালির কাজ। ৫. মাঝারি থেকে জোরালো কার্যকলাপ (MVPA) (Moderate-to-vigorous activity): দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং।
আপনি সব সময় এই পাঁচটি কাজের মধ্যে একটিতে ব্যস্ত থাকেন: বিছানায় (জেগে বা ঘুমিয়ে), স্থির হয়ে বসে থাকা বা নড়াচড়া করা, অথবা হালকা বা মাঝারি-জোরালো কার্যকলাপ করা।
আজকের নড়াচড়া আগামীকালকের মেজাজকে রূপ দেয়
এই গবেষণার জন্য, গবেষকরা ৩৫৪ জন সুস্থ তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের (গড় বয়স ২২.৬ বছর) ওপর এক থেকে দুই সপ্তাহ ধরে নজর রাখেন। তাদের ২৪ ঘণ্টার চক্রের প্রতিটি মিনিট রেকর্ড করার জন্য হাতে পরার মনিটর ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রতি রাতে অংশগ্রহণকারীরা কেমন ইতিবাচক, উদ্যমী বা শান্ত অনুভব করেছেন তার ভিত্তিতে তাদের মেজাজের মূল্যায়ন করেন।
উন্নত মডেলিং ব্যবহার করে দলটি প্রতিটি ব্যক্তির দিনের-পর-দিন পরিবর্তনগুলি তুলনা করে। যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানটি ছিল এই যে, যখন কেউ কম সময় বসে থাকে এবং বেশি সময় হালকা চলাফেরা করে, তখন তারা পরের দিন আরও ভালো অনুভব করেন।
এই পরিবর্তনগুলি প্রতিটি ব্যক্তির দৈনন্দিন রুটিনের ভিত্তিতে ঘটেছিল। এমন নয় যে সাধারণভাবে সক্রিয় মানুষরাই বেশি সুখী ছিল; বরং ব্যক্তিগত ছোট ছোট পরিবর্তনও সেই ব্যক্তির পরের দিনের ভালো মেজাজকে নির্দেশ করে।
ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন-এর কাইনসিওলজি বিভাগের সহ-লেখক ইয়ে লিয়াও (Yue Liao) অক্টোবর ২০২৫-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন:
"[আমাদের] গবেষণা নির্দেশ করেছে যে হালকা কার্যকলাপ—যেখানে আপনাকে জিমে যেতে হবে না বা তীব্র ব্যায়াম করতে হবে না—তা যখন বসে থাকার বদলে করা হয়, তখন পরের দিন আরও ভালো অনুভূতি হতে পারে। কাউকে ভাবতে হবে না, 'আমাকে দৌড়াতে হবে,' বা 'আমাকে এইসব বড় কাজ করতে হবে।' শুধু কম বসে থাকা এবং বেশি চলাফেরা করাও আপনার পরের দিনের মেজাজে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে।"
চিন্তা করো না সোনা (Don't Sweat It, Baby): বসে না থাকলে পরের দিনের মেজাজ অপেক্ষাকৃত ভাল থাকে।
বসে থাকা থেকে মাত্র ৩০ মিনিট সময় হালকা শারীরিক কার্যকলাপে স্থানান্তরিত করলে “উচ্চ-উত্তেজক ইতিবাচক অনুভূতি” বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে উৎসাহ, সজাগতা এবং আশাবাদের মতো অনুভূতি। আজকের সামান্য নড়াচড়াও আগামীকাল আপনার মানসিক শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
এর বিপরীতটিও সত্য: হালকা বা মাঝারি থেকে জোরালো শারীরিক কার্যকলাপের পরিবর্তে বসে থাকার সময় বাড়ালে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এবং সামান্য বিরক্তি বাড়ে। সর্বশেষ (২০২৫) গবেষণা অনুসারে, ঘুমের সময়, বিছানায় জেগে থাকার সময় এবং এমনকি মাঝারি থেকে জোরালো কার্যকলাপ এরও পরের দিনের মেজাজের সাথে এতটা ধারাবাহিকভাবে সংযোগ ছিল না।
সুখ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা আসে অবিচ্ছিন্ন স্থিরতাকে হালকা এবং সহজ নড়াচড়া দিয়ে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে। যেমনটি লিয়াও ব্যাখ্যা করেন, "উপকার পেতে আপনার ঘাম ঝরাতে হবে না। আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি চলাফেরা করলেই সাহায্য হয়।"
আপনার দৈনিক সময়ের পাই (Your Daily Time Pie)
এই গবেষণায় একটি ২৪-ঘন্টার কম্পোজিশনাল মডেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা আপনার দিনটিকে আচরণের একটি নির্দিষ্ট পাই হিসেবে বিবেচনা করে। একটি অংশে বেশি সময় দেওয়া মানে অন্য একটি অংশ থেকে কম সময় নেওয়া। যখন লিয়াও এবং অন্যরা "পুনর্বন্টন" (reallocation) পরিস্থিতি পরীক্ষা করেন, তখন এই প্যাটার্নটি বজায় ছিল:
৩০ মিনিট বসে থাকার বদলে হালকা কার্যকলাপ করলে পরের দিনের মেজাজ উন্নত হয়।
চলাফেরার সময় কমিয়ে তার বদলে বেশি সময় বসে থাকলে তার বিপরীত ফল হয়।
ঘুম বনাম বিছানায় জেগে থাকার সময়ের চেয়ে নড়াচড়া বনাম বসে থাকার সময় কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সময় ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যাস গঠনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আপনার কাছে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা আছে এবং প্রতিটি মিনিটের মূল্য রয়েছে। আপনার ভবিষ্যতের মেজাজ বাড়াতে একটি কার্যকলাপ থেকে অন্যটিতে সময় পরিবর্তন করুন। কাজের কলের সময় দাঁড়ান এবং চারপাশে হাঁটুন, কফি বিরতিতে হাঁটুন, অথবা এস্কেলেটরের বদলে দ্রুত গতিতে চলার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করুন।