ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩:১৩, ২০ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৫০, ২০ আগস্ট ২০২৫
ফাইল ফটো, বাসস।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে সুস্থ রাখতে অসংক্রামক রোগের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বাড়াতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষরিত হয়, রিপোর্ট বাসসের।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
যৌথ ঘোষণাপত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ স্বাক্ষর করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবগণের হাতে যৌথ ঘোষণাপত্র তুলে দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ঘোষণাপত্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ শুধু স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের উন্নয়নের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তাই এককভাবে নয়, বরং সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ ইতোমধ্যে দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই ঘটে অসংক্রামক রোগে এবং এর মধ্যে ৫১ শতাংশ অকাল মৃত্যু ঘটে ৭০ বছরের নিচে। অসংক্রামক রোগ হলে মানুষ উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এগুলো কেবল স্বাস্থ্য সংকট নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতির বড় অন্তরায়। ক্যান্সার বা জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে পরিবারগুলো প্রায়ই আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। তাই চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি প্রতিরোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেবল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পক্ষে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়। খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত—প্রত্যেক খাতেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এজন্য সকল মন্ত্রণালয়কে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং কার্যকর কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় নীতি স্বাস্থ্যবান্ধব হতে হবে। শিশু, কিশোর ও নারীর স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও যুবশক্তিকে সচেতনতা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে হবে।
‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নে অধ্যাপক ইউনূস তিনটি অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রথমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি গ্রহণ। দ্বিতীয়ত, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ও বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানো। এবং তৃতীয়ত, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটরিং, দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও দায়িত্বশীল নাগরিক আচরণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তর করা ছাড়া অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘এটি শুধুমাত্র একটি আয়োজনের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। আমি বিশ্বাস করি, এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এটি হবে অগ্রগতির একটি নতুন মাইল ফলক। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও এসডিজি পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডাসমূহ অধিকতর দক্ষতার সাথে অর্জনে সহায়ক হবে’।