নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৩০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৩০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারত রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তে সীমান্তের ওপারে আনন্দ, কিন্তু দেশে ক্ষোভ বাড়ছে কারণ স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১,৪০০ থেকে ১,৬০০ টাকা।
দুর্গাপূজার কূটনীতি বনাম ভোক্তার কষ্ট
প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজায় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজির ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে ১২.৫ মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৫২৫ টাকা)। কিন্তু বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের পাতে ইলিশ ক্রমেই দূর্লভ হয়ে উঠছে।
আবেদনের শেষ সময় ১১ সেপ্টেম্বর
ইলিশ রপ্তানিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদন করতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, ভ্যাট ও আয়কর সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
উৎপাদন বাড়লেও সংকট কাটেনি
২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৫,৭১,৩৪২ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হলেও চাহিদা মেটেনি। অন্যদিকে দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখের মতো উৎসবের সময়ে চাহিদা আরও বেড়ে যায়, যা বাজারে চাপ তৈরি করে।
সংস্কৃতি, কূটনীতি ও সংকট
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সৌজন্যে প্রতিবছর দুর্গাপূজায় ইলিশ রপ্তানি হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দেশে ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, পাতে ইলিশের যোগান কমে। তাতে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন রপ্তানি মোট উৎপাদনের তুলনায় কম হলেও এর প্রতীকী গুরুত্ব বিশাল। ভারতের জন্য এটি বন্ধুত্বের নিদর্শন, আর বাংলাদেশের জন্য এটি একটি হতাশার স্মারক। যদি দাম ও সরবরাহের এই প্রবণতা চলতে থাকে, তবে ইলিশ শিগগিরই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
“এটা সত্যিই এক ধরনের বিদ্রূপ,” মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজাউল করিম। “একদিকে আমরা ইলিশকে জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রচার করি, কিন্তু অন্যদিকে সাধারণ বাংলাদেশির ডাইনিং টেবিলে এই মাছের উপস্থিতি দিন দিন দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে।”
ভোক্তাদের হতাশা যখন বাড়ছে, তখন পরিবেশগত অবক্ষয় ইলিশ সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা—দূষণ, নদী দখল এবং অবকাঠামো প্রকল্প ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে ধ্বংস করছে এবং তাদের চলাচলের স্বাভাবিক পথ ব্যাহত করছে।
“যদি টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না যায়,” বলেন মাহবুবুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, “তাহলে ইলিশ উৎপাদন খুব দ্রুতই স্থবির হয়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে, আমরা যতই বেশি টন রপ্তানির পরিকল্পনা করি না কেন।”
এ সংকট মোকাবিলায় সরকার কঠোর মৎস্য ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য অতিরিক্ত মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ইলিশের ডিম ছাড়ার এলাকা রক্ষা করা। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, এই নীতির বাস্তবায়ন দুর্বল এবং অসঙ্গতিপূর্ণ।