ঢাকা, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ: তদন্ত কমিশন
Scroll
সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার
Scroll
শ্রীলঙ্কায় বন্যায় নিহত কমপক্ষে ১৯৩ জন, নিখোঁজ আরও অনেকে
Scroll
তারেক রহমানের দেশে ফেরায় নিষেধাজ্ঞা নেই : তৌহিদ হোসেন
Scroll
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ
Scroll
অধিকাংশ এয়ারবাস এ৩২০ বিমানের জরুরি সফটওয়্যার ত্রুটি সমাধান হয়েছে
Scroll
রাশিয়ার বৃহত্তম তেল টার্মিনালের একটি ড্রোন হামলার পর বন্ধ
Scroll
তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরতে বাধা কোথায়?
Scroll
মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন
Scroll
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩৭০ ছাড়িয়েছে
Scroll
​​​​​​​বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো নেই
Scroll
সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ : শিক্ষা উপদেষ্টা
Scroll
তারেক রহমানের দেশে ফেরায় সরকারের কোনো বাধা নেই: প্রেস সচিব
Scroll
আর্থিক খাত দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করছে, দাবি গভর্নরের
Scroll
সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপনের সুযোগ দুই মাস, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
Scroll
উপদেষ্টা পরিষদ সভায় খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া
Scroll
হাসিনার প্লট দুর্নীতি: অন্য একাধিক প্লটধারীকে খুঁজতে বলল আদালত
Scroll
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বন্যায় মৃত বেড়ে ৩২১, উদ্ধার তৎপরতা জোরদার
Scroll
হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো চিঠি পরীক্ষা করে দেখছে ভারত: জয়সওয়াল
Scroll
এবার বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্প, কেঁপে উঠল টেকনাফ

তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরতে বাধা কোথায়?

বিবিসি নিউজ বাংলা

প্রকাশ: ০৮:৫৩, ৩০ নভেম্বর ২০২৫

তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরতে বাধা কোথায়?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: বাসস।

মায়ের অসুস্থতার মধ্যেও দেশে ফেরার বিষয়ে 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়' বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তা আলোচনার ঝড় তুলেছে। কেন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে–– এই প্রশ্ন উঠেছে।

এ নিয়ে দিনভর রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। জবাবে মি. আলমগীর শুধু বলেছেন, "তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই"।

ওদিকে তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, "এ ব্যাপারে (তারেক রহমানের ফেরা) সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নাই"।

মি. রহমান অবশ্য অক্টোবরের শুরুতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে "দ্রুতই দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার" কথা জানিয়েছিলেন। তার দলের নেতারা বলেছিলেন যে, তিনি নভেম্বরেই দেশে ফিরবেন।

কিন্তু নভেম্বর শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে মি. রহমান নিজেই জানালেন যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ তার নেই।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ বড় দুটি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে, দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে 'বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে'।

বড় দুটি দল বলতে তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কথা বুঝিয়েছেন।

যদিও বিএনপির কোনো নেতাই এসব বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শুধু তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিষয়ে বলেছেন, "দলের বিষয় আছে। পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় আছে। সব মিলিয়েই তার দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে"।

যদিও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হলে 'পরিস্থিতি যাই হোক' তিনি দেশে ফিরবেন- এমন আভাসও দিয়েছেন দলের নেতারা।
তারেক রহমান কী বলেছেন
বাংলাদেশে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হয়ে আঠারো মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের তেসরা সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছিলেন তারেক রহমান।

পরে ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি।

বিএনপির প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমদ তার 'কারাগারে কেমন ছিলাম (২০০৭-২০০৮)' বইতে লিখেছেন, "এমনও হতে পারে তিনি (খালেদা জিয়া) জেনারেলদের সাথে এই সমঝোতা করেছিলেন যে, তারেক রহমান আপাতত নিজেকে রাজনীতিতে জড়াবেন না এবং এ মর্মে তারেক রহমান কোনো সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও দিয়ে থাকতে পারেন।"

২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন যে ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়েছে।

দীর্ঘসময় ধরে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ছিল যে আওয়ামী লীগ সরকারের 'মিথ্যা মামলা ও বাধার' কারণেই মি. রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি দেশে ফিরছেন না কেন- এই প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমশ জোরালো হচ্ছিলো।

বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করতে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসহ একটি ব্যানার, সামনে হাততালি দিচ্ছে অনেক মানুষছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বলে দল থেকে বলা হচ্ছিলো
বিশেষ করে গত রোববার জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তির পরপরই তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই সময়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য মি. রহমানের প্রতি অনুরোধ জানাতে দেখা গেছে।

শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান যে বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে মিসেস জিয়ার অবস্থা 'সংকটময়'। এরপর তারেক রহমানের দেশে ফেরার গুঞ্জন ও আলোচনা আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয় "এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনো সন্তানের মতো তারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর সেই বিষয় বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার সেই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই তার পরিবার আশাবাদী"।

এর কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান নিজেও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় একই স্ট্যাটাস দেন, যাতে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করছে না। একই সাথে তার ও বিএনপির বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয় যে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার সুযোগই তার বা দলের নেই।

ফলে প্রশ্ন উঠছে যে, মিস্টার রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ আসলে কাদের হাতে এবং কী কী কারণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১৫ মাস পরেও তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

ফেরার পথে বাধা কোথায়
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পার হয়েছে। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে এবং তার আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দায়ের হওয়া সব মামলা থেকে আইনি প্রক্রিয়াতেই অব্যাহতি পেয়েছেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান।

পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিএনপির দিক থেকে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা ও অস্ত্রে লাইসেন্সের আবেদনের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ফলে মামলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তার দেশে ফিরতে দৃশ্যত কোনো বাধা ছিল না।

তবে বিএনপির কিছু সূত্র বলছে, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের আপত্তির বিষয়টি কাজ করে থাকতে পারে। তবে কোন দেশ কেন ও কীভাবে তাদের এই আপত্তির কথা জানিয়েছে তা সূত্রগুলো নিশ্চিত করতে পারেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ফেসবুকে তারেক রহমান যা বলেছেন তাতে মনে হয় দেশে আসার বিষয়টি তার নিজের ওপর নির্ভর করে না এবং আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে যার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই।

"উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়টি সামনে এসেছিলো এবং যে যা-ই বলুন না কেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন না হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কোন ভরসায়। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই নির্ভর করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়ার ওপরে"।

মি. আহমদ বলেন, "১/১১ এর সময়ে কিছু ব্যাপার ছিল। তিনি (তারেক) এক ধরনের মুচলেকা দিয়ে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়াও বলেছিলেন যে তারেক লন্ডনে পড়ালেখা করবেন, রাজনীতি করবে না। আমরা জানি না সেই অঙ্গীকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কি না। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন কি-না তাও পরিষ্কার না"।

ওদিকে বিবিসি বাংলায় শনিবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশ বড় দুটি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে।

মি. জয়ের এমন মন্তব্য এবং তারেক রহমানের দিক থেকে তার দেশে ফেরা নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বহুল আলোচিত 'মাইনাস টু ফর্মুলার' বিষয়টিও অনেকের আলোচনায় আসছে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য করার কথিত উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে 'মাইনাস টু ফর্মুলা' হিসেবে পরিচিত।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, "মাইনাস টু নিয়ে যত কথা বলি না কেন... তখন আসলে এজেন্ডা ছিল মাইনাস ফোর। সেটা ছিল দুই পরিবারের ধারাবাহিক শাসনের বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেওয়া। এর মধ্যে একটা মাইনাস হয়ে গেছে (শেখ হাসিনা পরিবার)। বাকি অর্ধেকের মধ্যে খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়। ফলে বাকি থাকলেন তারেক রহমান। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তা শেষ পর্যন্ত মাইনাস ফোর-এ গড়ায় কি-না সেটি সময়েই জানা যাবে"।

তবে বিএনপি কয়েকজন নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে নির্বাচনের তফসিল হলে পরিস্থিতি যেমনই হোক দেশে ফিরবেন মি. রহমান এবং তিনিই নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেবেন।


 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন