ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বয়সের কাছে হার মানেননি মাঝি মনিরুল

মো: নাঈম হোসেন তালুকদার

প্রকাশ: ১০:৩৮, ২৮ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১০:৪০, ২৮ আগস্ট ২০২৫

বয়সের কাছে হার মানেননি মাঝি মনিরুল

তুরাগের তীরে যাত্রীর অপেক্ষায় মাঝি মনিরুল। সোমবারে তোলা ছবি।

 

বয়সের ভারে নুব্জে পড়েছেন ৭৫ বছর বয়সী মনিরুল ইসলাম কিন্তু জীবনের যুদ্ধে ক্ষান্ত দেন নি তিনি। মিরপুরের দিয়াবাড়ি তুরাগ নদীর খেয়াঘাটে প্রতিদিন বিকেলে যাত্রী পারাপার করছেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ডিংগি নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করেন।  বিকেল বেলায় একটু বেশি যাত্রী হয়, বিশেষত স্কুল-কলেজ ও অফিস ছুটির কারণে, তাই এ সময়টিই তিনি বেছে নিয়েছেন।  এক ঘাট থেকে অন্য ঘাট পারাপার করতে জনপ্রতি টাকা নিয়ে থাকেন। তাঁর নৌকাটি অন্যদের থেকে একটু ছোট তাই বেশি যাত্রী নিতে পারেন না তিনি। সাধারণত, একসাথে পাঁচ জনের বেশি যাত্রী বহন করতে পারেন না। প্রতিদিন তাঁর এখান থেকে আয় হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু শুক্রবার বা ছুটির দিনগুলোতে যাত্রীদের সংখ্যা খানিকটা বেশি হয়ে থাকে। সেই সময়ে তাঁর আয় ৫০০ টাকা বা কাছাকাছি হয়, বলছিলেন মনিরুল।

এই পেশায় আছেন প্রায় চার বছর ধরে। আগে তিনি রিক্সা চালাতেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন রিক্সা টানা সম্ভব হয় না। তার ওপর কিছু শারীরিক অসুস্থতাও রয়েছে তাঁর। আগের মত শক্তি পান না তিনি। তাই রিক্সা চালানো ছেড়ে দিয়ে এখন নৌকার মাঝি হয়েছেন।

মনিরুল ইসলাম বছরখানেক আগেও দিনের বেশিরভাগ সময়ে নদীতে নৌকা নিয়ে যাত্রী পারাপার করতে পাতেন। এখন নৌকার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে আর আয় গেছে কমে। সেটিও একটি কারণ তাঁর কর্মঘন্টা কমিয়ে আনার।

আয় কমে যাবার কারণে নৌকা চালানোর পাশাপাশি তিনি একটি কোম্পানির দারোয়ান হিসেবেও কাজ করেন। সেখানে তাঁকে রাত আটটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত কর্মরত থাকতে হয়। সেখান থেকে বাসায় ফিরে এক চিলতে ঘুম দেন। তারপর, আবারও দুপুর তিনটা থেকে নৌকা বাওয়া শুরু হয়। দারোয়ানের কাজ করে তিনি বেতন পান মাসে ১০ হাজার টাকা । তাঁর পরিবারে দুই মেয়ে এবং একটি মাত্র ছেলে। বিয়ে করে ছেলেটি আলাদা সংসার করেছে, বলে জানান তিনি। তাঁর ছেলে তাঁকে কোন আর্থিক সাহায্য করে না বলে তিনি জানান। 

কষ্ট করে দুই মেয়েরও বিয়ে দিয়েছেন তিনি । কিন্তু ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁর কাছে যৌতুক চেয়েছিল।  টাকা দিতে না পারায় মেয়েটিকে তাঁরা মানসিক নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে মেয়েটি মমানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। সে কারণে সে সংসার করতে পারেনি। এখন বাবার সাথেই থাকে মেয়েটি। সেই বাবাকে দেখাশোনা করে।

মনিরুল ইসলাম থাকেন গুদারাঘাট এর একটি বস্তিতে সেখানে তার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে তাঁর সংসার। মনিরুল ইসলামের সাথে কথা বলা আরও জানা গেল, তিনি যে নৌকাটির মাঝি, সেই নৌকা একজন দানশীল ব্যক্তি তাঁকে ১৩,০০০ টাকা দিয়ে নৌকাটি কিনে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, যে আয় হয় তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয় --বাসা ভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার খরচের পর হাতে তেমন কোন সঞ্চয় থাকে না। অসুস্থ মেয়েটির বা তার নিজের চিকিৎসার জন্য মাঝে মাঝে মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়। তবুও চলে যায় জীবন।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন