ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চীনে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন

মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত ঠেকানো জরুরি হয়ে উঠেছে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০:২৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত ঠেকানো জরুরি হয়ে উঠেছে

চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে: মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত। জীববৈচিত্র্য ফিরে আসায় সাইবেরিয়ান বাঘ, বুনো শুয়োর এবং এশিয়ান হাতির মতো বন্যপ্রাণীরা মানুষের বসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এর ফলে শারীরিক ক্ষতি, সম্পত্তির ধ্বংস এবং মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়েছে, রিপোর্ট গ্লোবাল টাইমসের।

সমস্যা: বন্যপ্রাণীর অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি

চীনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে তুলে ধরেছে। হেইলংজিয়াং প্রদেশে একটি বুনো বাঘ একজন গ্রামবাসীকে আহত করেছে। নানজিংয়ে বুনো শুয়োর একটি টেলিভিশন স্টেশন এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েছিল। হাইনানে সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং কিংহাই ও জিঝাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বাদামী ভাল্লুকেরা ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি করেছে। একসময় বিরল এই ঘটনাগুলো এখন সাধারণ হয়ে গেছে, কারণ প্রাণীর সংখ্যা এবং তাদের আবাসস্থল প্রসারিত হচ্ছে। এই সংঘাতগুলো শুধু শারীরিক বিপদের বিষয় নয়, বরং বিপন্ন প্রজাতি রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

সমাধানের অন্বেষণ: প্রতিক্রিয়াশীল থেকে সক্রিয় পদ্ধতি
এই সমস্যাটি উপলব্ধি করে, চীন তার শাসনব্যবস্থাকে প্রতিক্রিয়াশীল নিয়ন্ত্রণ থেকে সক্রিয় প্রতিরোধ এবং সহাবস্থানের দিকে পরিবর্তন করছে। পরিবেশ ও বাস্তুবিদ্যা মন্ত্রণালয় (MEE) এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নানা প্রকল্প বাস্তকায়ন করেছে। 

আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা: প্রাণীদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে এবং সতর্কতা জারি করতে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টাইগার অ্যান্ড লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কে একটি সমন্বিত আকাশ-থেকে-মাটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রায় ১,৮০০টি সতর্কতা জারি করেছে।

অবকাঠামো এবং প্রতিরোধ: স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বেড়া তৈরি করছে এবং সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসাচ্ছে। এই ন্যাশনাল পার্কটি বন্যপ্রাণীদের জন্য শীতকালে খাবারের ব্যবস্থা করে, যা তাদের গ্রামে ঢুকে পড়ার প্রবণতা হ্রাস করে।

ক্ষতিপূরণ: ২০টিরও বেশি প্রদেশ বুনো শুয়োরের মতো বন্যপ্রাণীর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ নীতি চালু করেছে। ২০২৪ সালে, ৭০,০০০ এরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ১০ কোটি  ইউয়ানের বেশি সরকারি তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছিল।

শহুরে অভিযোজন: শহরে কাচের দেয়ালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাখির ধাক্কা লাগার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা কাচে পাখি-নিরাপদ স্টিকার ব্যবহারের প্রচার করছে, নিরাপদ ইঁদুর ধরার ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে এবং শহুরে বন্যপ্রাণীর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পার্কগুলোকে আরও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলছে।

সামাজিক সম্পৃক্ততা: ইউনানে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অংশীদারিত্বে এশিয়ান হাতির জন্য একটি আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যা পরিবেশ-বান্ধব জীবিকার বিকল্প উৎসাহিত করে এবং প্রাণী ও মানুষের মধ্যে সরাসরি সংঘাত কমিয়ে আনে।

চ্যালেঞ্জ এবং সামনের পথ

এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বন্যপ্রাণীবান্ধব নকশার বাস্তবায়নের চেয়ে শহুরে উন্নয়ন প্রায়শই দ্রুত গতিতে হয়। ঐতিহ্যবাহী বেড়া বাদামী ভাল্লুকের মতো শক্তিশালী প্রাণীদের থামাতে অকার্যকর এবং ইলেকট্রনিক বেড়ার মতো নতুন প্রযুক্তির জন্য কোনো সমন্বিত জাতীয় মান নেই। এছাড়াও, উদ্ধার কেন্দ্রগুলো কর্মী সংকটে ভোগে এবং আহত প্রাণীদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের সক্ষমতা সীমিত।

লক্ষ্য হলো এমন প্রাতিষ্ঠানিক সমাধান খুঁজে বের করা যা পরিবেশগত সুরক্ষা এবং মানব উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। যদিও জীববৈচিত্র্য ফিরে আসছে, কিছু বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খল এখনও দুর্বল। তাই, "সংরক্ষণ-প্রথম" নীতি চীনের জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনার মূলনীতি হিসেবে থাকবে। বর্তমান প্রচেষ্টাগুলোর উদ্দেশ্য হলো এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যেখানে মানুষ এবং বন্যপ্রাণী তাদের ভাগ করা স্থানগুলোর সীমানা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন