ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ডিজিটাল এজিং: প্রযুক্তির প্রভাবে ত্বকের অকাল বার্ধক্য

নাহিদ সুলতানা

প্রকাশ: ১৪:৫৬, ৩ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০৪, ৪ আগস্ট ২০২৫

ডিজিটাল এজিং: প্রযুক্তির প্রভাবে ত্বকের অকাল বার্ধক্য

প্রতীকি ছবি

মানুষের জীবন যত ডিজিটালি ব্যস্ত হচ্ছে, ততই বাড়ছে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি আসক্তি। কোভিডের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের মতো গ্যাজেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা কর্পোরেট অফিসে কাজ করেন, তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই স্ক্রিনের সামনে কাটাতে হয়। কিন্তু এই আধুনিক জীবনযাত্রার একটি অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো 'ডিজিটাল এজিং'।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল গ্যাজেট থেকে নির্গত নীল আলো (ব্লু লাইট) বা হাই এনার্জি ভিজিবল লাইট (HEV) ত্বকের কোষে পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে ত্বক অকালে বুড়িয়ে যায়, যাকে বলা হয় ডিজিটাল এজিং। অতিরিক্ত ব্লু লাইটের সংস্পর্শে ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এই আলো থেকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল তৈরি হয়, যা ত্বকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এর চূড়ান্ত পরিণতি হলো ত্বকের অকাল বার্ধক্য।

এতদিন আমরা জানতাম যে শুধুমাত্র সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই ত্বককে বুড়িয়ে দেয়। কিন্তু ব্লু লাইট ত্বকের আরও গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং সেই অংশে পৌঁছায় যেখানে কোলাজেন ও ইলাস্টিন থাকে। ফলে ত্বকের টানটান ভাব নষ্ট হয় এবং চুলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায় কী?

ডিজিটাল এজিং থেকে বাঁচতে কয়েকটি সহজ অভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি:

. স্ক্রিন টাইম কমানো: এটি সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। বিশেষ করে যারা রাত জেগে সিনেমা দেখেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান, তাদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। মোবাইল স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো আমাদের স্লিপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়।

২. স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার: কম্পিউটার এবং গ্যাজেটে স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করলে ব্লু লাইটের ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা কমানো যায়, যদিও এটি শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না।

৩. সঠিক সানস্ক্রিন ও ক্রিম: এখন ঘরের ভেতরেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। যারা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তারা জিঙ্ক অক্সাইড অথবা এসপিএফ ৩০ যুক্ত মিনারেল সানব্লক ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি ৪ ঘণ্টা পর পর এটি পুনরায় লাগানো ভালো। ত্বকের ধরন অনুযায়ী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ক্রিমও ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হায়ালুরনিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের রিনিউয়াল প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।

খাদ্য ও জীবনযাত্রা:

ডিজিটাল এজিং মোকাবিলায় খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: খাবারের তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি রাখুন।

পর্যাপ্ত পানি পান: নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত জল পান করুন।

হেলদি ফ্যাট: বড় চর্বিযুক্ত মাছ থেকে প্রাপ্ত ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং বাদাম ত্বকের জন্য উপকারী।

ঘুম ও বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক, কারণ ঘুমের সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে।

চা-কফি এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত চা-কফি পান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।

এই সহজ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি ডিজিটাল এজিংয়ের প্রভাব থেকে আপনার ত্বক ও চুলকে অনেকাংশে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন