মো: নাঈম হোসন তালুকদার
প্রকাশ: ২২:০৫, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:০৬, ২২ অক্টোবর ২০২৫
মিরপুর শেরে-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে আবারও গর্জে উঠছে মিরপুরের শেরে-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। কিন্তু এই উৎসবের মাঝেও কালোবাজারি ও প্রতারণার থাবা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দর্শকদের কপালে।
টাইগারদের এই নতুন সিরিজ মিশনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবার নতুন করে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা চালু করেছিল। ১৮, ২১ এবং ২৩ অক্টোবর তারিখের এই ওয়ানডে সিরিজ উপলক্ষে দর্শকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে অনলাইনে বিসিবির নিজস্ব অ্যাপস অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল একটাই— লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা, বিশৃঙ্খলা ও হয়রানি দূর করে ঘরে বসে সহজে যেন দর্শকরা টিকিট কিনতে পারেন।
কিন্তু বিসিবির এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ সত্ত্বেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। অনেক দর্শক অভিযোগ করেছেন, অনলাইনে টিকিট কেনার চেষ্টা করলে দ্রুতই 'সোল্ড আউট' বা 'বিক্রি হয়ে গেছে' দেখাচ্ছে। অথচ স্টেডিয়ামের সামনে এসে দেখা যাচ্ছে, কালোবাজারিদের হাতে চড়া দামে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃত ক্রিকেটপ্রেমীরা যখন অনলাইনে টিকিট পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন বাধ্য হয়ে তারা কালোবাজারিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনছেন। সাধারণ ৫০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত! অনেক ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র একই টিকিট বারবার প্রিন্ট করে দর্শকদের কাছে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে লজ্জায় পড়ছেন অনেকে।
অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও অনেকে পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট, যার ফলে সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমীরা হতাশ হচ্ছেন।
এমনি একজন দর্শক রাকিব হোসেন তার চার বন্ধুসহ এসেছেন নারায়ণ গঞ্জ থেকে। তারা অনলাইনে টিকিট না পেয়ে মিরপুরে এসেছেন কিন্তু এখানে এসে এখানে তাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে। তিনি বলছেন অনলাইনে কিনতে গেলে দেখাচ্ছে ‘সোল্ড আউট’ কিন্তু ঠিকই এখানে কালোবাজারে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দর্শকদের কিনতে হচ্ছে ঐ টিকেট। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কেন খেয়াল করছে না সেটি তাদেরকে বিষ্মিত করেছে।
এক পুলিশ সদস্যর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বললেন, যখনই কোন ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তখন সে বলছে কালোবাজারিদের কাছ থেকে তারা টিকিট কিনছে না। তারা যদি সুস্পষ্ট ভাবে ইনফরমেশন না দেয় তাহলে তো আমরা যে কাউকে ধরতে পারি না। যদি দর্শকরা সাহায্য না করে তাহলে আমরা কালোবাজারের এই হাত কখনোই বন্ধ করতে পারবো না। তারা যদি তাদের কাছ থেকে না কিনে তাহলেই তো তারা আর পরবর্তীতে এই বাজারে কেউ টিকেট কিনবে না। প্রথমে সচেতন হতে হবে নিজেকে এবং পরে এটা বন্ধ করা যাবে।
দর্শকদের মতে, খেলোয়াড়দের জন্য দর্শকের উপস্থিতি একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু যদি কালোবাজারি ও প্রতারণার কারণে প্রকৃত ভক্তরাই মাঠে আসার সুযোগ না পান, তাহলে মাঠের পরিবেশেও তার প্রভাব পড়বে। অনেক দর্শক বলেছেন, বিসিবির উচিত যত দ্রুত সম্ভব এই কালোবাজারি চক্রকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে করে দর্শকরা প্রতারিত না হন এবং নির্বিঘ্নে খেলা উপভোগ করতে পারেন।