শিরোনাম
বিবিসি বাংলার সৌজন্যে
প্রকাশ: ০৭:৩৩, ৯ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: বিবিসি-এর সৌজন্যে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে। অতীতের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নির্যাতন, গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ থেমে নেই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রাণঘাতী গুলি ও হেফাজতে নির্যাতনে বিচারবহির্ভূত হত্যার বেশকিছু অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সরকারের সময়ে সারা দেশে অন্তত ৪০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের হিসেবে ওই সংখ্যা ৬০। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গড়ে প্রতি মাসে চারটির বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বর্তমান সরকারের আমলে সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাগুলোর তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকারকর্মী ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন। গুলিতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
"বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা কাস্টডিয়াল টর্চারের যে কালচার সেটা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বা নিরাপত্তা বাহিনী বেরিয়ে আসছে এখন পর্যন্ত এইটা বলার সুযোগ নাই। অর্থাৎ বিগত সরকারের আমলে যে অবস্থাটা ছিল, তার থেকে আপনি কিছু ব্যতিক্রম পেতে পারেন। কিন্তু খুব বেশি যে উন্নতি হয়েছে সেটা বলার সুযোগ আসেনি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে," বলেন তিনি।
গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় আলাদা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় সরকারি তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী।
"পাঁচ অগাস্টের পরিণতির পরে আবারো যদি কেউ লেথাল উইপন ব্যবহার করে, কারো গুলিতে মারা যায়, তাহলে মানুষের আশার জায়গাটা থাকে না," বলেন তিনি।
গোপালগঞ্জ, খাগড়াছড়ির মতো ঘটনায় গুলিতে মৃত্যুতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে 'অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের' অভিযোগ এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সমালোচনা করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
এ ব্যাপারে আইএসপির বিবিসিকে জানিয়েছে, প্রাণঘাতী গুলি সেনাবাহিনী শুধু অনুমোদিত রুলস অব এনগেজমেন্ট অনুযায়ী ব্যবহার করে। এছাড়া যেকোনো অভিযোগ আসলে সেনা আইন অনুযায়ী তদন্ত হয়। বর্তমানে তদন্তে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সেনাবাহিনী অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রাণঘাতী গুলি ও তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ
গত জুলাই মাসে এনসিপির গোপালগঞ্জ সফরকে ঘিরে সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলিতে একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানীর ঘটনা এটি।
গোপালগঞ্জে ঘটনায় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ করেছিলেন মানবাধিকারকর্মীরা।
ঘটনার পরদিন ১৭ই জুলাই সেনাবাহিনীর পক্ষে আইএসপির এক বিবৃতিতে বলেছিল 'আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছে সেনাবাহিনী'।
গোপালগঞ্জে গুলির ঘটনায় বাহিনীর নিজস্ব কোনো তদন্ত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়,
"গোপালগঞ্জে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং কমিশন কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে"।
তবে, গোপালগঞ্জে ঘটনা তদন্তে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করে সেটি গুলির ঘটনা সেভাবে তদন্ত করেনি। সম্প্রতি এই কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার তা এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি।
সরকার গঠিত ওই তদন্ত দলের একজন সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়টি তদন্ত করা কমিটির কার্যপরিধিতে ছিল না।
যে প্রতিবেদনগুলো আসছে, যে ভিডিও ফুটেজগুলো আসছে- তাকে উভয় পক্ষ থেকেই কিন্তু গুলির রেকর্ড পাওয়া গেছে, জানান তিনি।
"সাবোটাজ হওয়ার সম্ভাবনা একপাশ থেকে যেরকম আছে, আবার যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের পক্ষ থেকেও গুলিতে মারা গেছে এই সন্দেহ ছিল। এই জিনিসগুলো আমাদের টিওআর এর মধ্যে ছিল না যে কার গুলিতে মারা গেছে। এটা এখনো অমিমাংসিত। এটা হয়তো এক্সপার্ট যারা তারা করবে। তবে গুলিতে মারা গেছে এটা সত্য," বলেন তিনি।