ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

১৪ কার্তিক ১৪৩২, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

সালমান শাহ্ হত্যার পরিকল্পনা হয় গুলিস্তানে, চুক্তি ১২ লাখ টাকা

দৈনিক ইনকিলাবের সৌজন্যে

প্রকাশ: ১২:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সালমান শাহ্ হত্যার পরিকল্পনা হয় গুলিস্তানে, চুক্তি ১২ লাখ টাকা

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ্ এর মৃত্যুরহস্য জট খোলার সময় হয়ে আসছে। ছবি: সংগৃহীত।

 

৯০ দশকের রুপালি পর্দার তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ্ এর মৃত্যুরহস্য এখনও রয়ে গেছে অধরা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। কিন্তু এতে দ্বিমত পোষণ করে সালমান শাহর পরিবার। তাদের দাবি, সালমান শাহকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

অবশেষে সেই সন্দেহ ২৯ বছর পর বাস্তবে রূপ লাভ করলো। সম্প্রতি অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। গত ২০ অক্টোবর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের নির্দেশ দেন আদালত। মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম।

জানা যায়, দীর্ঘ ২৯ বছর পর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রুপ নেওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে দীর্ঘ ২৮ বছর আগে ১৯৯৭ সালে আসামি রেজভীর দেওয়া একটি জবানবন্দি।

জানা যায়,ওই জবানবন্দিতে রেজভী সালমান শাহর হত্যার দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারসহ অনেকে জড়িত। হত্যাযজ্ঞে আমিও ছিলাম।

১৯৯৭ সালের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রেজভী জানান, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার এক হত্যার চুক্তি। যে চুক্তি করেছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। এ হত্যা চুক্তিতে আরো ছিলেন বাংলা সিনেমার খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাভেদ।

রেজভী বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে রাত ৮টায় ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও রেজভী দেখা করেন।

এছাড়া ওই দিন ছাত্তার ও সাজু নামে আরো ২ জন ছেলে আসেন। এরপর ফারুক আসেন। ২ লাখ টাকা বের করে জানান সামিরার মা এই টাকা দিয়েছেন। সালমানকে শেষ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা দেবেন।

কিন্তু ২ লাখ টাকা নিয়ে ফারুকের সঙ্গে ডনের কথাকাটি হলে ফারুক বেরিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর আরো ৪ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। রেজভী জানান, ফারুক বলেন কাজের আগে ৬ লাখ ও কাজের পরে ৬ লাখ। এরপরই প্লাস্টিকের একটি দড়ি, সিরিঞ্জ, রিভলবার ইত্যাদি গুছিয়ে নেওয়া হয়।

এ সময় হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে রেজভী বলেন, রাত আড়াইটায় সালমান শাহর বাড়িতে যান ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মদ ভাই। রিজভীর দাবি, সে রাতে ঘুমন্ত সালমান শাহর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হত্যাকারীরা। নারকীয় হত্যাযজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন সামিরা, সামিরার মা লুসি এবং আত্মীয়া রুবি। এমনকি তিনি দাবি করেন, ঘুমন্ত সালমানকে ক্লোলোফর্ম দিয়ে বেহুশ করেন সামিরা নিজেই। কিছুক্ষণ পর সালমান শাহর জ্ঞান ফিরলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এ সময় সালমান শাহর শরীরে ইনজেকশন পুশ করতে বলেন আজিজ ভাই। সালমানকে হত্যা করার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তার লাশ।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হয় রূপালি পর্দায় রাজকুমার চিত্রনায়ক সালমান শাহর। এতোদিন এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলে উল্লেখ করেছে একাধিকক তদন্ত কমিটি। তবে সব তদন্তেই এড়িয়ে চলা হয়েছে সত্যকে। যে কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়।

সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য ১০ আসামি হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, নায়কের সাবেক শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও  রেজভি আহমেদ ফরহাদ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন