ঢাকা, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ: তদন্ত কমিশন
Scroll
সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার
Scroll
শ্রীলঙ্কায় বন্যায় নিহত কমপক্ষে ১৯৩ জন, নিখোঁজ আরও অনেকে
Scroll
তারেক রহমানের দেশে ফেরায় নিষেধাজ্ঞা নেই : তৌহিদ হোসেন
Scroll
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ
Scroll
অধিকাংশ এয়ারবাস এ৩২০ বিমানের জরুরি সফটওয়্যার ত্রুটি সমাধান হয়েছে
Scroll
রাশিয়ার বৃহত্তম তেল টার্মিনালের একটি ড্রোন হামলার পর বন্ধ
Scroll
তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরতে বাধা কোথায়?
Scroll
মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন
Scroll
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩৭০ ছাড়িয়েছে
Scroll
​​​​​​​বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো নেই
Scroll
সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ : শিক্ষা উপদেষ্টা
Scroll
তারেক রহমানের দেশে ফেরায় সরকারের কোনো বাধা নেই: প্রেস সচিব
Scroll
আর্থিক খাত দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করছে, দাবি গভর্নরের
Scroll
সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপনের সুযোগ দুই মাস, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
Scroll
উপদেষ্টা পরিষদ সভায় খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া
Scroll
হাসিনার প্লট দুর্নীতি: অন্য একাধিক প্লটধারীকে খুঁজতে বলল আদালত
Scroll
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বন্যায় মৃত বেড়ে ৩২১, উদ্ধার তৎপরতা জোরদার
Scroll
হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো চিঠি পরীক্ষা করে দেখছে ভারত: জয়সওয়াল
Scroll
এবার বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্প, কেঁপে উঠল টেকনাফ

গ্রে মার্কেট: মধ্যরাতে ডিবির হানা, ব্যবসায়ীদের লড়াই-এ নতুন মাত্রা

বিডিনিউজ২৪-এর সৌজন্যে

প্রকাশ: ০৯:৩৭, ২১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৩৭, ২১ নভেম্বর ২০২৫

গ্রে মার্কেট: মধ্যরাতে ডিবির হানা, ব্যবসায়ীদের লড়াই-এ নতুন মাত্রা

ছবি: বিডিনিউজ২৪-এর সৌজন্যে।


ডিবি স্বীকার করেছে, ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তারা ‘ভুল’ করে সোহেলকে ধরেছিল। তবে কেন তারা এর মধ্যে জড়াল, তার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।

সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসায় জড়িত এক ব্যক্তিকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে দশ ঘণ্টা ডিবি অফিসে আটকে রাখার ঘটনায় মোবাইল হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন উদ্যোগ ঘিরে ব্যবসায়ীদের দুটি পক্ষের অলিখিত যুদ্ধের বিষয়টি নতুন চেহারা পেয়েছে।

হ্যান্ডসেটের ‘গ্রে মার্কেটের’ ব্যবসায়ীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দিনের বড় অংশ সারা দেশে দোকান বন্ধ রাখেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা অভিযোগের আঙুল তোলেন প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের দিকে।

অন্যদিকে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সাংবাদিক আটকের পেছনে হাত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। সেই সাংবাদিকের সঙ্গে ‘অবৈধ মোবাইলের’ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

‘গ্রে মার্কেটের’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোবাইল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর এই বিরোধের মধ্যে ডিবি কীভাবে ঢুকে পড়ল, মঙ্গলবার রাত থেতে নানা নাটকীয়তায় তা স্পষ্ট হয়নি। তবে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকে আটকের বিষয়টি যে ‘ভুল করে’ ঘটেছে, ডিবি কর্মকর্তারা তা স্বীকার করেছেন।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে মোবাইল হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা আসার পর থেকেই এ খাতে একরকম যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের হাতে যে হ্যান্ডসেটগুলো রয়েছে, তার বেশিরভাগই ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আনা। বিটিআরসির হিসাবে এর হার মোট হ্যান্ডসেটের ৬০ শতাংশ।

বর্তমানে বাজারে বা দোকানে যেসব হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার বেশিরভাগই ‘অবৈধ’ বা ‘আন অফিসিয়াল’। আর এই ‘অবৈধ’ হ্যান্ডসেটের বাজারকেই বলা হয় ‘গ্রে মার্কেট’।

দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তৈয়্যব।

আরেকদিকে রয়েছেন কর-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাপথে দেশে মোবাইল ফোন নিয়ে এসে দীর্ঘদিন ধরে যারা ব্যবসা করছেন, সেই ‘গ্রে মার্কেটে’র ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নানা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করছেন।

এর অংশ হিসেবে বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)। আর সেই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সোহেল, যিনি আবার ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে বাড্ডার বাসা থেকে সোহেলকে ধরে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। দশ ঘণ্টা ডিবি অফিসে আটকে রাখার পর বুধবার ভোরে তাকে বাসায় ‘স্ত্রীর জিম্মায়’ পৌঁছে দেওয়া হয়।

প্রথমে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ‘ডিবি পরিচয়ে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার’ ঘটনা হিসেবেই সামনে আসে। পুলিশের এ ইউনিট আবার আগের চরিত্রে ফিরে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে অনেকে সরকারের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ একে ‘সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ’ হিসেবেও দেখান।

ছাড়ার পাওয়ার পর সোহেল দাবি করেন, তিনি এমবিসিবির ‘মিডিয়া পরামর্শক’ হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। আর এমবিসিবির সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করতে ‘ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ইঙ্গিতে’ ডিবি ধরে নিয়ে গিয়েছিল বলে তার অভিযোগ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা ব্যবসায় জড়িত মিজানুর রহমান সোহেল এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অনলাইন ট্র্যাভেল এজেন্সি ‘টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম’ এর পরিচালনা পর্ষদ সদস্য সোহেলসহ কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সেবার।

কোনো পরোয়ানা না থাকলেও এবার কেন তাকে ধরা হয়েছিল, এর পেছনে কারো হাত ছিল কি না, তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।

দ্বৈরথের প্রেক্ষাপট

২০১৬ সালে সিমকার্ড নিবন্ধন পক্রিয়া শুরুর পর তৎকালীন সরকার হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছিল একাধিকবার; তবে তা কার্যকর হয়নি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে স্মার্টফোনের আবির্ভাবের পর এক যুগের বেশি সময় ‘গ্রে মার্কেট’ নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান ছিল না। ফলে দিনে দিনে এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজারে পরিণত হয়েছে মোবাইল ফোনের এই ‘গ্রে মার্কেট’।

দেশীয় হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর অর্থায়নে বিটিআরসি এখন আবার এ মার্কেট বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে বলে ২৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর কার্যকরের আগ পর্যন্ত দেশের নেটওয়ার্কে থাকা সব মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসবে। তবে এর পরে নতুন ফোন বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যাবে। এই সময়ের পর টানা পার্টির মাধ্যমে আনা অবৈধ ফোন দেশের নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না।

সেই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ার এমদাদুল বারী অবৈধ ফোন ব্যবসায়ীদের ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে বলেন “চোরের সঙ্গে আলোচনা করে কখনো আইন তৈরি হয় না।” কিন্তু এর তিনিদিন পরেই আবার গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিটিআরসি।

ওই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই মূলত গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়। তারা বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে।

বিটিআরসির এই ব্যবসায়ীদের দাবির কিছুটা মেনে নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে মোবাইল ফোনের আমদানি শুল্ক কমানোর অনুরাধ করে চিঠিও দেয়। পাশাপাশি দেশের বাজারে অবৈধ পথে ঢুকে পড়া মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো যেন বৈধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেই অনুরোধও আসে বিটিআরসির পক্ষ থেকে।

‘বোঝার ভুল’

বিটিআরসির উদ্যোগে সন্তুষ্ট না হওয়া গ্রে মার্কেট নিজেদের মত করে ‘লবিং’ চালিয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার নিজেদের দাবি দাওয়ার জানান দিতে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তারা।

সেই সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে এমআইসিবির সভাপতি মোহাম্মদ আসলামের নাম ছিল, তবে নামের নিচে ফোন নম্বরটি দেওয়া ছিল ভোরের কাগজের সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলের।

ডিবির দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মূলত সিদ্ধান্ত ছিল এমআইসিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করার। আমন্ত্রণপত্রে মো. আসলামের নম্বরের নিচে দেওয়া নম্বরের সূত্র ধরেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্ত করে মধ্যরাতে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন ডিবির কর্মকর্তারা। এর কিছুক্ষণ পর ভোররাত ৩টার দিকে এমবিসিবির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসের নম্বরের সূত্র ধরে তাকেও ধরে আনা হয়।

সোহেলকে ধরে নিয়ে আসার বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই সভাপতি-সেক্রেটারির নাম ব্যবহার করেছিলেন।

“পরে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারিকে ডেকে আনি এবং বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি হওয়ায় ভোরবেলা সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে বাসায় দিয়ে আসা হয়েছে।”

পিয়াসকেও সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সন্ধ্যায় ডিবির প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পিয়াসদের সংগঠন থেকে যে সংবাদ সম্মেলনটি করা হচ্ছিল, তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মিজানুর রহমান সোহেলকে। অমন্ত্রণপত্রটি ইংরেজিতে হওয়ায় সেখানে কী লেখা ছিল তা পিয়াস দেখেননি বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করতেই আটক?

এদিকে ছাড়া পাওয়ার পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে এক ফেইসবুক পোস্টে ভোগান্তির বর্ণনা দেন সোহেল। তিনি দাবি করেন, এমবিসিবির সংবাদ সম্মেলন ‘বন্ধ করার জন্য’ তাকে আটক করা হয়েছিল, কারণ তিনি ওই সংগঠনের ‘মিডিয়া পরামর্শক’ হিসেবে যুক্ত রয়েছেন।

ফেইসবুক পোস্টে সোহেল বলেন, “কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হল? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সাথে সংগঠনের (এমবিসিবি) সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়।”

এমবিসিবির সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি তুলে ধরে সোহেল লিখেছেন, “সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইল, সেটা দেশের সবাই জেনে গেল।”

তার অভিযোগ, “দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে।

“এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙ্গে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।”

সোহেল লিখেছেন, “একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হল? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?”

ফয়েজের প্রশ্ন

গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণপত্রে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলের ফোন নম্বর থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “গতকাল সাংবাদিকদের কাছে প্রেস কনফারেন্সের নিমন্ত্রণের একটি চিঠি আসে— ‘অ্যাড্রেসিং রিগার্ডিং এনইআইআর ইমপ্লিমেন্টেশন’ শিরোনামে। যেখানে মোহাম্মদ আসলাম নামে একজন নিজেকে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন। কিন্তু এই সংগঠনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিওটিতে নিবন্ধিত নয়।

“পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, অবৈধ আমদানিকারক চক্রই ভুঁইফোঁড় পরিচয়ে নতুন এক সংগঠন বানিয়ে এনইআইআরবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। আসলামের ফোন নম্বর বলে যে নম্বর সেখানে দেওয়া হয়, সেটি সেই সাংবাদিকের (মিজানুর সোহেল) বলে আমাকে অন্তত হাফ ডজন মানুষ কিছুক্ষণ আগে নিশ্চিত করেছেন। এবং সেই সাংবাদিক নিজেই সাংবাদিকদের কাছে সেই প্রেস ইনভিটেশনটি পাঠান।”

সাংবাদিক কেন নিজের নম্বর দিয়ে ব্যবসায়ীদের সংগঠনের আমন্ত্রণপত্র বিলাচ্ছেন–সেই প্রশ্ন তুলে ফয়েজ লিখেছেন, “একজন সাংবাদিক কীভাবে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের সভাপতি পরিচয়ে ভুয়া টাইটেল, ভুয়া পরিচয় ও নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে স্মাগলিং-অভিযুক্ত গোষ্ঠীর হয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন? একজন সাংবাদিক কীভাবে চোরাচালান কারবারিদের মুখপাত্র, পিআর এজেন্ট, পরামর্শক বা বেনেফিশিয়ারি হয়ে কাজ করতে পারেন? এটা কি সাংবাদিকতার নৈতিকতার মধ্যে পড়ে।”

‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ মন্তব্য করে তৈয়্যব লিখেছেন, “যে কোনো পেশার মানুষ–যদি নৈতিক সীমার বাইরে গিয়ে কোনো অবৈধ চক্রের সঙ্গে জড়িত হন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন। তবে আমি মনে করি, এ ধরনের পদক্ষেপ দিনের বেলায়, স্বচ্ছভাবে নেওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সবার জন্যই নিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করে।”

যা বলা হল সেই সংবাদ সম্মেলনে

মিজানুর রহমান সোহেল না থাকলেও বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এমবিসিবির নেতারা।

সোহেল ও পিয়াসকে ধরে নেওয়ার জন্য ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে দায়ী করে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি শামীম মোল্লা বলেন, “গত রাতে তিনটা তিন মিনিটে আমাদের এই বিজনেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসকে গ্রেপ্তার করেছে। এই উদ্দেশ্যগুলো আমরা জানি–বুঝি, কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আমাদের সভাপতির (মোহাম্মদ আসলাম) বাড়িতে ডিবি হানা দিয়েছে।”

শামীম মোল্লা বলেন, “একটা সিন্ডিকেট, আমরা উপদেষ্টার সহকারীর নাম শুনতে পাচ্ছি। ওরা মিলে আমাদের দেশের কয়েকজন মুনাফালোভী সুদখোর সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কোটি কোটি মানুষকে এরা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার পিছু না হটলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে শামীম বলেন, “এই দেশের ২০ কোটি জনগণের মোবাইলের ভাগ্য কেন শুধু ১৮ জন লাইসেন্সধারীকে দেওয়া হবে?”

তৈয়্যবকে উদ্দেশ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি যদি এসব কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন, দয়া করে এসব কাজ থেকে আত্মসম্মান বোধ রেখে সরে আসুন। কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের অজুহাতে ওদের মুনাফা বেশি করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনারা এসব পাঁয়তারা করবেন না।”

এনইআইআর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি বাস্তবায়ন হলে দেশে মোবাইল চুরিসহ মোবাইলনির্ভর অপরাধ কমবে, সরকার বছরে হাজার কোটি টাকা ওরপরে শুল্ক পাবে আর দেশীয় মোবাইল ফোন শিল্প দাঁড়াতে পারবে। আর গ্রে মার্কেট তাদের ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের রুটি-রুজি হুমকিতে পড়ার দোহাই দিয়ে আসছে।

পিয়াসের মুক্তির দাবিতে পরদিন দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায় গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

মোবাইল মার্কট বন্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে এমবিসিবির নেতা পিয়াসকে না ছাড়া পর্যন্ত সারা দেশের সব মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওই ঘোষণার পর রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, মোতালেব প্লাজাসহ বেশিরভাগ মোবাইলের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। বসুন্ধরা ও মোতালেব প্লাজায় মোবাইল মেরামতের দোকানগুলোও বন্ধ রাখা হয়। এসময় ফোন মেরামত করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

তবে এই কর্মসূচির পাল্টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশের ১৮টি ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন এমআইওবি বলে, ‘বৈধ ডিলারদের’ সকল দোকান ও বিক্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া এসব দোকান খোলা থাকবে স্বাভাবিকভাবেই।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন