ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

৬ কার্তিক ১৪৩২, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

বন্ধ শ্যামপুর সুগার মিল; মিষ্টি স্মৃতি মলিন, হতাশায় শ্রমিকরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২:০৯, ২১ অক্টোবর ২০২৫

বন্ধ শ্যামপুর সুগার মিল; মিষ্টি স্মৃতি মলিন, হতাশায় শ্রমিকরা

অবহেলায় পড়ে রয়েছে মিলের শেড, ট্রাক্টর ইঞ্জিন ও পুরো মিল। ছবি: সংগৃহীত।


এক সময় ছিল যখন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলো আখের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠত।

যখনই কারখানার সাইরেন বাজত, শ্রমিক কলোনি এবং স্থানীয় বাজারে যেন প্রাণ ফিরে আসত। কিন্তু সেই সাইরেন দীর্ঘকাল ধরে নীরব।

নয় মাস আগে মিলটি পুনরায় খোলার ঘোষণা দেওয়া হলেও, এক সময়ের এই অঞ্চলের একমাত্র ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল এখনও বন্ধ রয়েছে।

সেই প্রতিশ্রুতিতে যে আশা জেগেছিল, তা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে, কারণ প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে সরকারি টাস্কফোর্সের পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে আছে।

ফলস্বরূপ, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ৪,৫০০ এরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এদের অনেকেই চরম দুর্দশার মধ্যে জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করছেন।

মিল শ্রমিক কলোনির পুরো পরিবারগুলো এখন অনিশ্চয়তার সম্মুখীন—কোনো আয় নেই, আর কবে বা আদৌ পরিস্থিতি উন্নত হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

১১১.৪৫ একর জমির ওপর ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্যামপুর সুগার মিল ১৯৬৭ সালে আখ মাড়াই (crushing) শুরু করে।

দৈনিক ১,০১৬ টন এবং বার্ষিক ১০,১৬১ টনেরও বেশি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই মিলটি একসময় ১০,০০০ একর জুড়ে আখ চাষকে সমর্থন করত এবং ১০,০০০ এরও বেশি কৃষকের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২২৬ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে সুগার মিলটি আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

অধিকাংশ কৃষক আখ চাষ বন্ধ করে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন, যা আর্থিকভাবে লাভজনক প্রমাণিত হয়নি এবং তাদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, সরকার একটি টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে মিলটি পুনরায় খোলার পরিকল্পনার ঘোষণা করেছিল। পরিকল্পনায় পর্যাপ্ত আখের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মিলটিকে লাভজনক ভিত্তিতে পুনরুজ্জীবিত করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এখানে পূর্ববর্তী খবরের বাকি অংশের বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো:

তহবিল সংকটে শ্যামপুর সুগার মিলের পুনরুজ্জীবন স্থগিত: হতাশায় কৃষক ও শ্রমিক
পরবর্তী সময়ে, ২০২৪-২৫, ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের জন্য আখ চাষ এবং পুনরায় রোপণের ব্যয়ের একটি আর্থিক প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছিল।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি, ৫৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ১৩ জুলাই আরও একটি চিঠি পাঠিয়ে তহবিল চাওয়া হয়। এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ৩০ জুলাই তারিখের একটি চিঠিতে অর্থ বিভাগ তহবিল ছাড়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।

সম্প্রতি মিলটি পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদক দেখতে পান যে, পুরো চত্বরটি আগাছায় ভরে গেছে। আখ পরিবহনের ট্রাক্টর এবং ট্রলিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অযত্নে রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে পড়ে থেকে জং ধরে নষ্ট হচ্ছে।

শ্যামপুরের আখ চাষি ফজলুল হক বলেন, মিলটি পুনরায় খোলার দাবিতে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মিলটি হয়তো পুনরায় চালু হবে না শুনে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

আরেক কৃষক আনারুল ইসলাম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় অর্থনীতি ধসে পড়েছে।

তিনি বলেন, "এখানে একসময় কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হতো। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা শহরবাসীর মতো জীবনযাপন করতেন। এখন বিকল্প ফসল ফলিয়ে লাভ হচ্ছে না, আর স্থানীয় ব্যবসা শুকিয়ে গেছে।"

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, "পরিকল্পনা ছিল প্রথম ধাপে শ্যামপুর সুগার মিল পুনরায় চালু করা। কিন্তু অর্থ বিভাগ তহবিল ছাড় করতে অস্বীকার করায় তা সম্ভব হয়নি। আমাদের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অর্থ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করছেন। বেতন ও ভাতাদি সময়মতো পরিশোধ করা হচ্ছে। আমরা চাই মিলটি যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় চালু হোক।"

বন্ধ সুগার মিল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, "টাস্কফোর্স এই মিলগুলোকে আধুনিকীকরণ এবং লাভজনক করার উপায় প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় তহবিল ছাড়া এই উদ্যোগগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, হাজার কোটি টাকার এই সম্পদ লোকসানের বোঝা না হয়ে লাভজনক হতে পারত।"

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, "আমরা মিলটি দ্রুত পুনরায় চালু করা যায় কিনা, তা দেখতে মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমরা আশাবাদী।"

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন