ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

৬ কার্তিক ১৪৩২, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

মানুষের চিন্তা ডিকোড করার যন্ত্র আবিষ্কার

গোপনীয়তার জন্য হুমকি হতে পারে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০:০৭, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৮, ১৬ আগস্ট ২০২৫

মানুষের চিন্তা ডিকোড করার যন্ত্র আবিষ্কার

ছবি এনপিআরের সৌজন্যে।

 

মানুষ কি চিন্তা করছে, তা একটি ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টার ফেসের মাধ্যমে ডিকোড করা সম্ভব হয়েছে। এতে করে ব্যক্তির চিন্তার গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

তবে, এই ইন্টারফেস একপি পরীক্ষামূলক ডিভাইস যার উদ্দেশ্য একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির কথা বলার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা। এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর প্রতিবেদক জন হ্যামিল্টন গবেষণাটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন, যা মস্তিষ্কের সংকেত ডিকোড করা প্রযুক্তির মাধ্যমে উত্থাপিত গোপনীয়তার উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছে।

তিনি কথা বলেছেন এরিন কুঞ্জের সাথে, যিনি বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড নিউরাল প্রস্থেটিক্স ট্রান্সলেশনাল ল্যাব (NPTL)-এ অধ্যাপক জেইমি হেন্ডারসন এবং শাউল ড্রুকম্যানের অধীনে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করছেন। তাঁর গবেষণা মূলত উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন স্পিচ নিউরোপ্রস্থেসিস তৈরি এবং কথা ও ভাষার স্নায়ুভিত্তিক প্রক্রিয়া বোঝার ওপর কেন্দ্রীভূত।

ইরিন কুঞ্জ বলেন, এই ইমপ্ল্যান্ট করা ডিভাইসগুলো মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স পর্যবেক্ষণ করে, যা কথা বলার সাথে জড়িত পেশীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এনপিআরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি গোপন কথা ফাঁস করা এড়াতে নিজের জিভে কামড় দিতে পারেন, কিন্তু মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো একটি কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) এমন কথা প্রকাশ করতে পারে যা কখনো বলার উদ্দেশ্যই ছিল না।

ইরিন কুঞ্জ বলেন, "যখন পক্ষাঘাত ব্যক্তি কথা বলার চেষ্টা করে, তখন আমরা সেই সংকেতগুলো রেকর্ড করি এবং সেই স্নায়ু সংকেতগুলোকে ঐ ব্যক্তিরা যে শব্দগুলো বলতে চাইছে সেগুলোতে রূপান্তরিত করি।"

এটি হয় স্ক্রিনে দেখা যেতে পারে অথবা একটি সিনথেসাইজড ভয়েসের মাধ্যমে শোনা ডেতে পারে। একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে একটি শব্দ বা বাক্য প্রকাশ করার জন্য সচেতনভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এটি ক্লান্তিকর এবং সময়সাপেক্ষ। তাই কুঞ্জ এবং তার দল BCI ব্যবহারকারী চারজনের সাহায্যে একটি উন্নত উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

কুঞ্জ বলেন, "প্রথমেই আমরা আলাদা আলাদা শব্দগুলো পরীক্ষা করি, যখন তারা কথা বলার চেষ্টা করছিল, যখন তারা কোন কথা কল্পনা করছিল, এমনকি যখন তারা শুনছিল বা পড়ছিল।"

দলটি লক্ষ্য করে যে অভিপ্রেত কথা এবং কল্পিত কথার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। অবশেষে, তারা এমন শব্দ এবং বাক্য ডিকোড করতে সক্ষম হন যা কেবল একজন ব্যক্তির কল্পনায় বিদ্যমান ছিল।

কুঞ্জ বলেন, "আমরা ,২৫,০০০ শব্দের শব্দভান্ডার থেকে বাক্য ডিকোড করে ৭৪% পর্যন্ত সঠিকতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।"

এটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য যোগাযোগকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে। তবে কুঞ্জ বলেন, এই সাফল্য একটি প্রশ্নও উত্থাপন করেছে: "যদি ভেতরের কথা অভিপ্রেত কথার মতোই হয়, তাহলে ইন্টারফেস ব্যবহার করার সময় এটি কি ভুল করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে?"

এটি সম্ভব, তাই দলটি ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য দুটি কৌশল চেষ্টা করে। একটি হলো ডিভাইসটিকে ভেতরের কথার সংকেত উপেক্ষা করার জন্য প্রোগ্রাম করা। এটি কাজ করেছে, কিন্তু এর ফলে কল্পিত শব্দ ডিকোড করার গতি এবং সহজতা কমে যায়। তাই কুঞ্জ বলেন, দলটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যেমন অ্যালেক্সা এবং সিরির ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি ধার করেছে, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট বাক্যাংশ শুনলে চালু হয়।

কুঞ্জ বলেন, "আমরা 'chitty chitty bang bang' বেছে নিয়েছি, কারণ এটি সাধারণ কথোপকথনে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না এবং এটি খুব সহজেই শনাক্তযোগ্য ডিকোডযোগ্য।"

এটি অংশগ্রহণকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয় যে, কখন তাদের ভেতরের কথা ডিকোড করা হবে। এই গবেষণাটি, যা 'Cell' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ডিকোড করে এমন নতুন প্রযুক্তির গোপনীয়তা নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এদিকে, এবিষয়ে আইনজ্ঞ এবং এআই নীতিবিদ নীতা ফারাহানি, আমাদের মনকে যন্ত্রের সাথে মিশে যাওয়ার নীতিগত চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে চলেছেন। ডিউক ইউনিভার্সিটির নিতা ফারাহানি এই বিষয়ে "The Battle For Your Brain" নামে একটি বই লিখেছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় ব্যবহৃত দুটি গোপনীয়তাসুরক্ষা ব্যবস্থা’ একটি সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।

তিনি বলেন, "তবে এগুলো উভয়ই ধরে নেয় যে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি যা বাস্তবে আমাদের মন যেভাবে কাজ করে তার সাথে নাও মিলতে পারে।"

উদাহরণস্বরূপ, ফারাহানি বলেন, গবেষণার অংশগ্রহণকারীরা সবসময় তাদের ভেতরের কণ্ঠস্বর নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না।

ফারাহানি বলেন, "তাদের একটি গণনা করার কাজ ছিল, এবং সেই কাজ চলাকালীন, ইন্পারফেস  ঠিকই সেই সংখ্যাগুলো ধরতে পেরেছিল যা মানুষ চিন্তা করছিল। এর অর্থ হলো ব্যক্তিগত এবং প্রকাশ্য চিন্তার মধ্যেকার সীমানা আমরা যতটা মনে করি তার চেয়ে বেশি অস্পষ্ট হতে পারে।"

ফারাহানি বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো ব্রেইন কম্পিউটার ইন্পারফেস ডিভাইসগুলো ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা গোপনীয়তা সুরক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে পারে। তবে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ গ্রাহক-পর্যায়ের ইন্টারফেস-এর ক্ষেত্রে নাও থাকতে পারে। এগুলো ক্যাপের মত মাথায় পরা হয় এবং ভিডিও গেম খেলার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়। ফারাহানি বলেন, নতুন গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে, এই গ্রাহক ডিভাইসগুলোও বলা হয়নি এমন শব্দ শনাক্ত করতে সক্ষম হতে পারে।

ফারাহানি বলেন, "এই গবেষণা যা দেখায় তা হলো কিছুটা অস্বস্তিকর। শব্দ চিন্তা করা এবং সেগুলো বলার জন্য মস্তিষ্কের প্যাটার্নগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে একই।"

তিনি জানান, এর ফলে অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল এবং ফেসবুকের মতো কোম্পানিগুলো একজন গ্রাহকের মনের মধ্যে কী চলছে তা জানতে পারবে, এমনকি যদি সেই ব্যক্তি তা শেয়ার করতে না চায়।

ফারাহানি বলেন, "আমরা যত এই গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাব, আমাদের মস্তিষ্ক তত বেশি স্বচ্ছ হয়ে উঠবে, এবং আমাদের বুঝতে হবে যে মস্তিষ্কের স্বচ্ছতার এই যুগটি সত্যিই আমাদের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত।"

তবে ফারাহানি আশাবাদী যে গবেষকরা ইতিমধ্যেই মানুষকে তাদের মানসিক গোপনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করার উপায় খুঁজছেন।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন