ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ভিসা নিয়ে পাকিস্তানি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তায়

নানা কঠোর পদক্ষেপ অভিবাসীদের উদ্বিগ্ন করছে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০:৪৪, ২৩ আগস্ট ২০২৫

ভিসা নিয়ে পাকিস্তানি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তায়

প্রতীকি ছবি। সংগৃহীত।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ও ভিসা নিয়ে বসবাসকারীরা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ছোটখাটো অপরাধ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটিও তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার কেড়ে নিতে পারে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে জানা গেছে যে, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে জানানো হচ্ছে। এতে পাকিস্তানি কমিউনিটির মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে, রিপোর্ট করেছে পাকিস্তানের ডন পত্রিকা।

ভার্জিনিয়ার উত্তর অংশে থাকা দুজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী একটি ট্রাফিক কোর্টে গিয়ে অবাক হন, যখন বিচারক তাদের জানান যে, এখন থেকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের রেকর্ডও এর কাছে পাঠানো হবে।

বাল্টিমোরের শিক্ষার্থী ইউনুস খান বলেন, "আমরা শিকাগো যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এখন আমাদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা ভিসার ওপর নির্ভরশীল এবং সামান্য ভুলও ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।"

যারা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি। বাল্টিমোরের আরেক শিক্ষার্থী সামিনা আলী বলেন, "আমাদের মধ্যে কয়েকজন ওই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলাম। এখন আমরা জানি না আমরা এখানে থাকতে পারব নাকি আমাদের বহিষ্কার করা হবে।"

জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাজিদ বলেন, "আমাদের বেশিরভাগই টিউশনের খরচ চালানোর জন্য পার্ট-টাইম কাজ করি। এখন আমরা জানি না যে আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারব কিনা।"

ভার্জিনিয়ার একটি কমিউনিটি কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ বলেন, "প্রায় সব বিদেশি শিক্ষার্থীই এখন ভীত। আমরা জানি না কাজ করতে পারব কিনা, গাড়ি চালাতে পারব কিনা, এমনকি বাইরেও যেতে পারব কিনা। এটি সেই আমেরিকা নয়, যার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম।"

যারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাক  ছেন, তাদের উদ্বেগ আরও বেশি।

ওয়াশিংটনে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭ থেকে ১০ লাখ পাকিস্তানি বসবাস করেন, যাদের অধিকাংশই নাগরিক বা দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা। অনেকে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন না, তাই সঠিক সংখ্যা জানা যায় না।

ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের সর্বশেষ 'ওপেন ডোরস' রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১,১২৬,৬৯০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।

২০২৪ সালে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী গেছেন ১০,৯৮৮ জন। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে গেছেন ১৭,০৯৯ জন এবং নেপাল থেকে ১৬,৭৪২ জন। এই তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত, তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩,৩১,৬০২ জন।

পাকিস্তানি দূতাবাস অনুমান করে যে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ১২,৫০০-তে দাঁড়াবে, যা এখনো অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশের তুলনায় অনেক কম।

আরও কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করছে। এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাবের লক্ষণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে।

কর্মকর্তাদেরকে আরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন, কিংবা ইহুদিবিদ্বেষী হয়রানি বা সহিংসতায় অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করেন।

মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবার মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাগেসার বলেন, "যারা এই দেশকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকা-বিরোধী মতাদর্শ প্রচার করে, তাদের আমেরিকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত নয়।"

এছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাক চালকদের জন্য কর্মী ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এর কারণ হিসেবে নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং আমেরিকানদের জীবিকার ওপর এর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।

মালাউই ও জাম্বিয়ার ভিসা আবেদনকারীদের এখন থেকে পর্যটন বা ব্যবসায়িক ভিসার জন্য ১৫,০০০ ডলার জামানত দিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে, ১২টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ আছে এবং আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এই কঠোর পদক্ষেপ পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ও ভিসা নিয়ে বসবাসকারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

ওয়াশিংটনে অবস্থিত পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য ভিসাধারীদের কাছ থেকে নানা ধরনের প্রশ্ন পাচ্ছে এবং সেগুলো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠাচ্ছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছেন এবং বৈধ কাগজপত্র, অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা, এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সতর্ক থাকার গুরুত্ব তুলে ধরছেন।

 

 

 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন