প্রকাশ: ০৯:৩৭, ৮ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৪২, ৮ আগস্ট ২০২৫
নেপালের হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি বলেছেন যে, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে নেপালের উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই, তবুও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের কার্বন নির্গমন নগণ্য, তবুও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।"
বৃহস্পতিবার তুর্কমেনিস্তানের আওয়াযায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতিসংঘ উন্নয়নশীল ভূবেষ্টিত দেশগুলোর (LLDCs) সম্মেলনে "গ্লেসিয়াল মেল্ট অ্যান্ড বিয়ন্ড: আনর্যাভেলিং দ্য ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জেস ইমপ্যাক্টিং এলএলডিসিএস" শীর্ষক একটি সাইড ইভেন্টে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী অলি হিমবাহ গলার কারণে নেপালের ওপর তৈরি হওয়া মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "একটি হিমালয় পর্বতমালাঘেরা দেশ হিসেবে হিমবাহ গলে যাওয়া আমাদের সবচেয়ে জরুরি জলবায়ু চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। হিমালয় কেবল পানির উৎস এবং downstream-এ বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের জীবনরেখা নয়, বরং এটি আমাদের পরিচয়, জাতীয় গর্ব এবং ভবিষ্যৎকেও ধারণ করে।"
তিনি হিমালয় অঞ্চলের বৈশ্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "হিমালয় এবং সাগর একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, একে অপরের পরিপূরক। হিমালয় পৃথিবীর শীতলীকরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যবশত, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাটি হারিয়ে যাচ্ছে," দ্য হিমালায়ান টাইম্স এই সংবাদ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, নেপালের মতো দেশের জন্য হিমবাহ গলে যাওয়া কেবল একটি পরিবেশগত উদ্বেগ ,নয়, বরং এটি উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং টিকে থাকার জন্য একটি সার্বক্ষণিক হুমকি। তিনি একটি সাম্প্রতিক উদাহরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, "গত ৮ই জুলাই, একটি পরিষ্কার দিনে, হিমবাহের হ্রদ ফেটে রাসুয়া জেলার লেন্দে নদীতে বিপর্যয়কর বন্যা হয়। বন্যায় নেপাল এবং চীনের সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেসে যায়, প্রায় ২০ জন মারা যায় এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের জলবায়ু-প্ররোচিত দুর্যোগ দিন দিন বাড়ছে এবং আগামী বছরগুলোতে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, কৃষি, জলবিদ্যুৎ, পর্যটন এবং জীববৈচিত্র্যের মতো জলবায়ু-সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলো ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অলি বলেন, "এই হুমকি আমাদের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের পাহাড়ে যা ঘটে, তার প্রভাব জাতি, অঞ্চল এবং প্রজন্মজুড়ে পড়ে।"
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক নির্গমন ধারা চলতে থাকলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশ আয়তন হারিয়ে যেতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলো —গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, মেকং এবং অন্যান্য— কোটি কোটি মানুষের জীবনরেখা। হিমবাহ গলে গেলে এই নদী ব্যবস্থাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে, যা পানির সহজলভ্যতা, কৃষি এবং শক্তি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের হিমবাহ গলে যাওয়া কেবল বরফের ক্ষতি নয় — এটি জীবন, জীবিকা, ঐতিহ্য এবং আশার ক্ষতি। হিমবাহের কান্না নীরব নয়। এটি উচ্চ, জরুরি এবং একটি আবেদন— কেবল পদক্ষেপের জন্য নয়, বরং ন্যায়বিচারের জন্য।"
প্রধানমন্ত্রী অলি সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন: "সমন্বিত এবং সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এখনো হিমালয়কে বাঁচাতে পারি। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আমরা হিমবাহ গলে যাওয়ার গতি কমাতে পারি।"
তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ে নেপালের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, "নেপাল প্রস্তুত—কাজ করতে, অংশীদার হতে এবং নেতৃত্ব দিতে—যাতে হিমালয়ের কণ্ঠস্বর গলে যাওয়া বরফের নিচে চাপা না পড়ে, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায়বিচারকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তা জোরালোভাবে উঠে আসে।"