ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অপার সম্ভাবনাময় হতে পারে পর্যটন খাত

পর্যটক আকর্ষণে বাংলাদেশের সত্যিকারের কোন চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় না

গোবিন্দ শীল

প্রকাশ: ২২:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২৫

অপার সম্ভাবনাময় হতে পারে পর্যটন খাত

মন ছুটে যায় সমুদ্রের নীল জলরাশির কাছে

ঘুরে বেড়াতে আমরা কে না ভালবাসি! কাজে থাকতে থাকতে মন যখন ক্লান্ত হয়ে আসে, শরীরের আগে মনই ছুটে যায় কোন সমুদ্র সৈকতে অথবা পাহাড়ি কোন শহরে, কোন সংরক্ষিত পার্ক বা বনাঞ্চলের ধারেকাছে! রবি ঠাকুর গেয়েছেন, "আমরা পথে পথে যাবসারে সারে…!"ভ্রমণের উপকার বলে শেষ করা যাবে না। এটি মস্তিষ্কের জন্য টনিক বিশেষ। তাই যখন পুরোনো যুগে কঠিণ কোন রোগ হলে বৈদ্য বা ডাক্তার উপদেশ দিতেনজায়গা বদল করুন এই জায়গা বদল করার টানে নতুন নতুন হাজার হাজার পর্যটন কেন্দ্র বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠছে এখন।

সকলকে অবাক করে দিয়ে সৌদি আরব যখন তার পর্যটন নিয়ে নিজেদের সাফল্য গাথা  লিখছে, তখন বিশ্ব ভ্রমণ পর্যটন কাউন্সিল (WTTC) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এই শিল্পের মোট অবদান সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে র্পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সংগঠণটি বলছে, এবছরে বিশ্বব্যাপী পর্যটন রেকর্ড ভাঙবে বলে ধারণা করা যায়। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় মহামারী-পূর্ববর্তী ব্যয়ের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। বিশ্ব ভ্রমণ পর্যটন কাউন্সিল (WTTC) অনুসারে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এই শিল্প বৈশ্বিক জিডিপির ১০.% গঠণ করে। তবে, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হলেও, বিশ্বব্যাপী খাতটির সকল স্থানে সমভাবে পুনরুদ্ধার হয়নি।  

WTTC-এর ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক প্রভাব গবেষণা অনুসারে, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় ২০২৫ সালে ঐতিহাসিক . ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০১৯ সালে . ট্রিলিয়ন ছিল। 

এই বছর, ভ্রমণ পর্যটন বিশ্ব অর্থনীতিতে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ১১.৭০ ট্রিলিয়ন অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ১০.% এই খাতের নানা উপখাতে বিশ্বব্যাপী নতুন চাকরি তৈরি হবে প্রায় কোটি ৪০ লাখ লোকের। এতে করে এসব খাতে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়াবে ৩৭ কোটি এই সংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। অন্যভাবে বলা যায়, ভ্রমণ পর্যটনশিল্প বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

WTTC-এর সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সিম্পসন বলেন, “মানুষ ভ্রমণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি আমাদের সেক্টরের প্রতি আস্থার একটি শক্তিশালী ভোট এবং তা একটি  স্থায়ী ক্ষমতার লক্ষণ।

তিনি সতর্ক করে বলেন, "কিন্তু ভ্রমণ পর্যটনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী চিত্র শক্তিশালী হলেও, এর পুনরুদ্ধার অসম রয়ে গেছে। যদিও কিছু দেশ এবং অঞ্চল রেকর্ড-ব্রেকিং সংখ্যা তৈরি করছে, অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতিগুলি স্থবির রয়ে গেছে।"

তাঁর মতে, যদিও বিশ্বের অনেক অর্থনীতির জন্য কিছু ইতিবাচক খবর রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং জার্মানির মতো বেশ কয়েকটি প্রধান ভ্রমণ পর্যটন বাজারে প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এক নতু প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ২০৩৪ সালের মধ্যে ভ্রমণ পর্যটন শিল্প ৩০ বিলিয়ন পর্যটক তৈরি করবে বলে মনে করছে তারা। অর্থাৎ, ভ্রমণ পর্যটনশিল্প বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম পর্যটন শিল্পের ১০টি দেশ হল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মেক্সিকো, ইতালি, স্পেন এবং তুরস্ক।

বছরের শুরুর এক হিসেবে ২০৪. বিলিয়ন ডলার আয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ পরিসংখ্যানের শীর্ষে রয়েছে। তারপর, ফ্রান্স ১০ কোটি পর্যটক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে।

পর্যটন খাত দেশের ইমেজ ব্রান্ডিং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যথেষ্ট অবদান রাখে, যা এই দেশগুলির অর্থনীতিকে অধিকতর শক্তিশালী করছে।

সৌদি আরব এগিয়ে যাচ্ছে

অত্যন্ত সংরক্ষণশীল দেশের পটভূমিতে বসে সৌদি আরব তার নিজস্ব সাফল্যের গল্প লিখছে। বিশ্ব ভ্রমণ পর্যটন কাউন্সিল এর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ভ্রমণ পর্যটন এই বছর সৌদি অর্থনীতিতে ৪৪৭. বিলিয়ন রিয়াল (১১৯ বিলিযন ডলার) যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে - এটি একটি নতুন রেকর্ড এবং বিশ্বের দ্রুততম জনপ্রিয় গন্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম একটি স্থানে পরিণত হয়েছে।  

ভ্রমণ পর্যটন ২০২৫ সালে সৌদি আরবের জিডিপিতে ১০% এরও বেশি অবদান রাখবে, এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় হবে ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। এটি তাদের সর্বকালের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটি দ্রুতই বিশ্বব্যাপী পর্যটনের পাওয়ার হাউস হয়ে উঠছে।

এছাড়া, বিস্তর অঞ্চল জুড়ে, মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রমণ পর্যটন শিল্প আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ৩৬৭. বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখবে এবং এই বছর ৭৭ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা ব্যক্ত করা হচ্ছে।

এখানে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় এই বছর প্রায় ১৯৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা ২০১৯ সালের ব্যয়ের চেয়ে ২৪% বেশি, আর দেশীয় ভ্রমণকারীদের ব্যয় প্রায় ১১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একটি টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে ভ্রমণ পর্যটন শিল্প। সৌদি আরবের কেয়ার্নি (কনসালটেন্ট) এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তৈরি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন শিল্প . ট্রিলিয়ন ডলারের অবদান রাখতে পারে। এটি বিশ্ব ভ্রমণ পর্যটন কাউন্সিলের অনুমান অনুসারে মোট বিশ্ব অর্থনীতির ১১% এরও বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ঘাটতি এবং অবকাঠামোগত ঘাটতির ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা গেলে এই খাতটি বিশ্ব অর্থনীতির তুলনায় . গুণ দ্রুত সম্প্রসারিত হতে পারে এবং উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয়

২০১৯ সালে মহামারী-পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ . ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে এবছর . ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।

এই খাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এরপরই থাকবে ইউরোপ।

তবে, উত্তর আমেরিকার মতো পরিণত বাজারগুলি ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারপরও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এখনও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন ইউরোপের কম খরচের এয়ারলাইন্সের কল্যাণে অনেকে উত্তর আমেরিকায় ভ্রমণ করতে বের হন।

এদিকে,চীনেও, ধীরগতির প্রবৃদ্ধি বা ধীরগতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটন খাত।

সউদি আরব কেন এগিয়ে?

দেশটি ভিশন ২০৩০ এর অধীনে একটি সাহসী অর্থনৈতিক রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে।

তাারা তেল বহির্ভূত খাতকে আগ্রাসীভাবে গুছিয়ে বৈচিত্রময় করে তুলছে যেখানে পর্যটনকে একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিলাসবহুল এবং অ্যাডভেঞ্চার পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য মেগা-প্রকল্পগুলিতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে।

সামাজিক রীতিনীতি শিথিল করা হচ্ছে, যেমন, অবিবাহিত দম্পতিদের জন্য পর্যটন ভিসা প্রদান এবং সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়ে আধুনিক পর্যটন চাহিদার সাথে ঐতিহ্যের ভারসাম্য বজায় রাখছে সৌদি সরকার।

 অতুলনীয় ধর্মীয় পর্যটন (হজ ওমরাহ) রয়েছে সউদি আরবের

ইসলামের দুটি পবিত্রতম শহর (মক্কা মদিনা) কেবল সৌদি আরব অন্যান্য মুসলিম দেশের পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত, যেখানে অন্য কোনও দেশের প্রতিযোগিতা করার সুযোগ নেই। প্রতি বছর কোটিরও বেশি ধর্মীয় দর্শনার্থী এই দুটি শহর ভ্রমণ করেন যেখান থেকে আয় হয় বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে নতুন বিমানবন্দর, হোটেল এবং গ্র্যান্ড মসজিদ সম্প্রসারণ করে প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লির থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সউদি আরবের বাইরে অন্যান্য দেশের অবস্থা

সউদি আরবের পরেই সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)- দুবাই এবং আবুধাবি পর্যটনে আধিপত্য বিস্তার করে, যার অবদান বছরে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার+ (গত বছরের অনুমান অনুযায়ী)

এদিকে, তুরস্ক-ইস্তাম্বুল, ক্যাপাডোসিয়া এবং উপকূলীয় রিসোর্টগুলি আয় করে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার (আংশিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য, আংশিকভাবে ইউরোপ)

মিশর-কায়রো, লুক্সর, শার্ম এল-শেখ আয় করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার। ইসরায়েল ফিলিস্তিনে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও পর্যটন খাতে আয় করে থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।

কাতারবিশ্বকাপের পরে, পর্যটন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাদের আয় হচ্ছে বছরে থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার। এদিকে, জর্ডান, ওমান, লেবানন, বাহরাইন, কুয়েতসম্মিলিতভাবে আয় করছে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার।

এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া

চীন, জাপান, ভারত অন্যান্য এশীয় দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। চীন ২০২৪ এই খাতে রাজস্ব রাজস্ব আয় করেছে . ট্রিলিয়ন ডলার (দেশীয় আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বাবদ)

পর্যটন খাতে জাপানের রাজস্ব গত কয়েক বছর ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার যা কিনা তাদের রেকর্ড সংখ্যক বিদেশী ভ্রমণকারীকে আপ্যায়ন করার ইংগিত দেয়।

দুর্বল ইয়েনের প্রভাব: পশ্চিমা পর্যটকদের জন্য জাপান ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী হয়েছে, যদিও মুদ্রাস্ফীতি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নতুন ক্যাসিনো, ’এক্সপো ২০২৫ ওসাকাজাপানে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করবে, নি:সন্দেহে।

এছাড়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

যেমন, থাইল্যান্ডে ২০২৪ সালে এসেছেন . কোটি পর্যটক,ভিয়েতনামে গত বছরে . কোটি পর্যটক এসেছিলেন যা ২০২৫ সালের মধ্যে কোটিতে পৌঁছাতে পারে। থাইল্যান্ডের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি, মুখরোচক খাবার এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণে তারা বিশ্বের ৮ম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এবছরে . কোটিরও বেশি মানুষ থাই সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডে ভিসার নিয়ম শিথিল করা এবং কৌশলগত সরকারি উদ্যোগের কারণে পর্যটকদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

তবে, মঙ্গলবারে ( আগস্ট) পর্যটন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সিংগাপুরের একটি পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে থাইল্যান্ডে বিদেশী পর্যটক আগমন শতাংশ কমেছে। দেশটি এই মাসে কোটি ৯৩ লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আঞ্চলিক প্রতিযোগীরা - বিশেষ করে চীন, জাপান এবং ভিয়েতনাম - লাভজনক পর্যটন বাজার দখলের জন্য তাদের উদ্যোগ তীব্র করার সাথে সাথে এই পতন ঘটেছে। এই অঞ্চলের অনেক দেশই তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কৌশলের ভিত্তি হিসাবে পর্যটনকে স্থান দিয়েছে।

পর্যটক সংখ্যায় জাপান থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে গেছে

একটি লক্ষনীয় একটি তুলনায় দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে জাপান কোটি ১৫ লাখ বিদেশী পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।

এই সময়ে থাইল্যান্ড পেয়েছে ( মাসে) মোট প্রায় কোটি ৬৭ লাখ পর্যটক। এতে প্রমাণিত হচ্ছে এই অঞ্চলে পর্যটন নিয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

জাপান ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (JNTO) জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসময়ে  জাপানে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক এসেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের ভ্রমনকারী, যাদের সংখ্যা ৪৭ লাখ ২০ হাজার।

জাপান ভ্রমণকারী দেশগুলির মধ্যে থাইল্যান্ড ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে, লাখ ৮০ হাজার থাই পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছেন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ১০. শতাংশ বেশি।

চীন শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে

চীন থাইল্যান্ডের বৃহত্তম উৎস বাজার হিসেবে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে, মালয়েশিয়াকে অল্পের জন্য পেছনে ফেলেছে তারা। সাত মাসের মধ্যে থাইল্যান্ডে চীনা পর্যটক আগমনের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ লাখ, যেখানে মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন ২৬ লাখ ৬০ হাজার ট্যুরিস্ট।

সাত মাসের সময়কালে আন্তর্জাতিক পর্যটন থেকে ৮৯৫.১৬ বিলিয়ন বাথ বা প্রায় কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এই রাজস্ব আয় করা সত্ত্বেও এটি ২০২৪ সালের একই সময়কালের তুলনায় .২২ শতাংশ কম।

অনেক পেছনে রযেছে বাংলাদেশ   

আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সত্যিকারের কোন চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় না। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভ্রমনকারীর জন্য বিনোদন আর সর্বোপরি পর্যটন অবকাঠামোর দূর্বলতা রয়েছে অনেক। সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র তিন লাখ বা তার কিছু বেশি পর্যটক বছরে বাংলাদেশে আসেন। এঁদের বেশিরভাগই আবার পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। দেশে পৃথিবীর অন্যতম নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতকক্সবাজার সমুদ্র সৈকত’, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ জঙ্গল নানা ঐতিহাসিক স্থান থাকলেও পর্যটনকে আমরা খাত হিসেবে উন্নত করতে বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছি। বিভিন্ন সময়ে পর্যটন মন্ত্রণালয় লাপুস-মার্কা কর্মসূচি নিলেও বাস্তবে কোন উন্নতি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে যাওয়া ভ্রমনকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু বছরেই অন্তত নানা কাজে ভ্রমণে প্রায় ১৩/১৪ লাখ বাংলাদেশী ভারতে যান। এছাড়া, সার্কভূক্ত দেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, চীন এসব দেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন।

ভ্রমণের উন্মাদনায় জল ঢেলে দিল মার্কিন ট্যারিফ

এযারলাইন্সগুলোর সংগঠণ আইএটিএ বলছে, এবছরে তাদের নিট মুনাফা ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা ২০২৪ সালে অর্জিত ৩২. বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি কিন্তু পূর্বে প্রক্ষেপিত ৩৬. বিলিয়ন ডলারের (ডিসেম্বর ২০২৪) থেকে কম। বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতে মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব পরোক্ষ হলেও তা তাৎপর্যপূর্ণ হবে, মূলত অর্থনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে। ট্যারিফের মান বেড়ে গেলে ভোক্তাদের নিত্য পণ্যে খরচ বাড়বে, ফলে ভ্রমণের জন্য ব্যয়যোগ্য আয় হ্রাস পেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনা পণ্যের উপর ১০% শুল্ক মধ্যবিত্তদের বাজেটকে সংকুচিত করতে পারে, আর বিদেশগামী পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস করতে পারে।

একইভাবে, পারস্পরিক শুল্ক যেমন যেমন, ইইউ বা চীন দ্বারা প্রতিশোধমূলক শুল্ক মার্কিন রপ্তানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে, যা তাদের অর্থনীতি এবং বিদেশগামী ভ্রমণের চাহিদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলে, এবছর তেলের দাম কম হলেও ভ্রমণের ওপর ট্যারিফের শেষমেশ ভূমিকা কি দাঁড়ায় তা বুঝতে আমাদের আরও কিছু সময় দরকার।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন